ঘৃণাভাষণ, বিশেষত সংখ্যালঘুদের প্রতি বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে বরাবরই আলোচনা হয়েছে দেশে। সম্প্রতি সংসদে এই ধরনের মন্তব্যের কারণে আবার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে শিরোনামে। তবে, এই ঘৃণাভাষণের জেরে ক্ষতি শুধু সংখ্যালঘুদের নয়। বরং এই ঢাল সামনে রেখে বোকা বানানো হচ্ছে গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষকেই। এমনটাই মত মৌলানার। এই মন্তব্যের কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ এবং ঘৃণাভাষণে কি আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সংখ্যাগুরুরাই? সম্প্রতি এই প্রশ্নই তুলে দিলেন জমিয়ত-উলেমা-ই-হিন্দ সংগঠনের প্রধান মৌলানা মাহমুদ মাদানি। বরাবরই অন্যরকম চিন্তাভাবনার জন্য নজর কাড়ে তাঁর বক্তব্য। অনেকেরই মনে পড়বে, ২০০৯ সালে পাকিস্তানের তখনকার প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুসারফকে একহাত নিয়েছিলেন তিনি। সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভারতীয় মুসলিমরা তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে জানে, তার জন্য পাকিস্তানের পরামর্শের দরকার নেই। আর ভারতীয় মুসলিমদের আলাদা করে দেখারও দরকার নেই, তা নিয়ে মন্তব্য করারও প্রয়োজন নেই।
আরও শুনুন: ইসলাম ধর্মাবলম্বী সাংসদকে ধর্ম তুলে কটূক্তি, বিতর্কে জড়িয়েছেন আগেও… কে এই রমেশ বিধুরি?
সেই মৌলানা মাহমুদ মাদানিই এবার সাম্প্রতিক ঘৃণাভাষণ নিয়ে তাঁর ভিন্নমত প্রকাশ করলেন। মুসলিম-বিদ্বেষ বা ঘৃণাভাষণ যে চলছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এ জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে নানা কথাও শুনতে হয়। এর জবাবে কী বলা উচিত? মৌলানার মত, এর মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজনই নেই। বরং যা জরুরি তা হল, এর উত্তর দেওয়া। তিনি জানান, এই দুয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে, এবং তা বহু মানুষকে বোঝানো বেশ শক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একরকম নৈরাশ্য কাজ করছে। তা মোকাবিলার একমাত্র উপায় হল, সকলের সঙ্গে কথা বলা। যা উপরে উপরে দেখানো হচ্ছে বা যা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে, তাই-ই একমাত্র সত্যি নয়। বরং বাস্তবতা অন্য কথাও বলে। এই আশা জাগিয়ে তোলাই প্রথম কাজ বলে মনে করেন তিনি।
আরও শুনুন: যাত্রা থামল পুরোনো সংসদ ভবনের, এবার কী পরিণতি হবে এই ভবনের?
সেই সঙ্গে তিনি এ-ও মনে করেন যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি এই যে বিদ্বেষ তা ক্ষতি করছে সংখ্যাগুরুরও। কেননা তাঁর মতে, এই যে সমস্যা, তা কেবল সংখ্যালঘুর সমস্যা নয়। তা দেশের সমস্যা। এই সংকট সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের উদ্বেগেরও কারণ বটে। কেন? ব্যাখ্যা করে মৌলানা বলেন, মুসলিমদের উপর যা হচ্ছে আর তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির যা অবস্থান, তা তাঁর কাছে হতাশাজনকই বটে। দলগুলি তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তারা বরং দেশের গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষকেই এই ধরনের বিদ্বেষ উসকে দিয়ে বোকা বানাচ্ছেন বা ঠকাচ্ছেন।
আরও শুনুন: ছিল না কেন্দ্রের বিজ্ঞাপনেও, ইন্দিরা এনেছিলেন বলেই কি সংবিধানে বাদ ‘সেকুলার’ ‘সোশালিস্ট’?
মৌলানার এই মত নিয়ে অবশ্য আগেই নানা স্তরে আলোচনা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ আসলে দৈনন্দিন জ্বলন্ত সমস্যাগুলো থেকে নজর ঘোরাচ্ছে, এই অভিযোগই ওঠে। এই নিয়ে যত বাদানুবাদ চলে, তত রাজনৈতিক দলগুলি মানুষের কাছে তাদের জবাবদিহির জায়গা থেকে সরে যায়। আর তাতে ফাঁপরে পড়ে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনের বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে যায়। তা যেমন সংখ্যালঘু, তেমন সত্যি সংখ্যাগুরুদের ক্ষেত্রেও। মৌলানা মাদানির কথায় রইল সেই ইঙ্গিতই।