২০২১-এর বিদায় আসন্ন। আর এই বিদায়বেলায় পিছনে ফিরে দেখলে দেখা যাচ্ছে, বছরটা যে খুব ভালো গেছে, তা বলা যায় না। কেউ করোনা কাঁটায় হারিয়েছেন কাছের মানুষ, কেউ বা হারিয়েছেন জীবিকা। তবু এর মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ জ্বালিয়েছেন আশার প্রদীপ। সাধারণ হয়েও নিজেদের বুদ্ধি, মেধা ও পরিশ্রমের জোরে হয়ে উঠেছে অসাধারণ, অনন্য। বছরের শেষবেলায় তেমনই কিছু গল্প শুনে নিই আমরা, যা আমাদের আরও একটু সাহস জোগাবে আগামী বছরের পথচলায়।
ইতিহাসের পাতায় চলে যাচ্ছে আরও একটা বছর। করোনা কাঁটায় শুরু থেকেই এফোঁড়-ওফোঁড় হয়েছে ২০২১। কিন্তু তার মধ্যে থেকেই জীবনের অন্য মানে খুঁজে নিয়েছেন কেউ কেউ। যে যার ক্ষেত্রে সফলতার শিখর ছুঁয়ে এসেছেন। এই শেষবেলায় রইল তেমনই কিছু সফলতার গল্প। সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে এক বঙ্গতনয়ার গল্প। ইংলিশে স্নাতকোত্তর পাশ করেছিলেন প্রথম বিভাগে। না তারপরেও চাকরিবাকরির শিকে ছেড়েনি কপালে। বাবার একরত্তি দোকান, কখনও কখনও সংসারের জোয়াল ঠেলতে ভ্যানরিকশাও চালাতে হয় তাঁকে। পারিবারিক পুঁজিও তেমন নেই যে বড় ব্যবসা দাঁড় করাবেন। এই সময়ে ইউটিউবের একটি ভিডিও সাহস জুগিয়েছিল তাঁকে। আর সেই সাহসে ভর করেই আপাতত হাবড়া স্টেশনে একটি চায়ের দোকান খুলেছেন তরুণী। নাম দিয়েছেন ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’। আর সেটাই ইউএসপি তাঁর দোকানের। প্রথম দিকে ঘরে বাইরে নানা কথা শুনতে হলেও সে সব কানে নেননি। তাঁর মতে কোনও কাজই ছোট নয়। বাঁধা গতে না চলেও যে জীবনে সাফল্য পাওয়া যায়, সেটিই প্রমাণ করে দিয়েছেন হাবড়ার মেয়ে টুকটুকি দাস।
আরও শুনুন: SPECIAL PODCAST: তিন ইয়ারের ইয়ারবুক
এর পরেই যাঁর কথা বলব, তিনিও একজন মহিলা। আপাত ভাবে নিজের পেশায় সফল হওয়ার পরেও অন্যরকম কিছু করার ইচ্ছেই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শীর্ষে। চাকরি করতেন ব্যাংকে। পঞ্চাশ বছরের জন্মদিনে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজের একটি সংস্থা খুলবেন। নারীদের জন্য, নারীদের মতো করে ভাববে এমন একটি সংস্থা। সংস্কৃত শব্দ ‘নায়িকা’ থেকে বেছে নিয়ে সংস্থার নাম রাখলেন ‘নাইকা’। নারী প্রসাধনী থেকে পোশাকআশাক, গয়নাগাটি- ক্রমশ সফলতার শিখর ছুঁয়েছে মুম্বইয়ের মেয়ে ফাল্গুনী নায়ারের ওই সংস্থা। ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে ৭০টি আউটলেট খুলেছে ফাল্গুনীর সংস্থা। চলতি বছর তাঁর ওই সংস্থার শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ৮৯ শতাংশ। শেয়ার বাজারের হিসেবে এটিই ভারতের প্রথম মহিলা পরিচালিত সংস্থা, যা স্টক মার্কেটে সাড়া ফেলে দিয়েছে।
আরও শুনুন: ২০২১ মোটেও গোমড়ামুখো নয়, দেশ-বিদেশের নানা মজার ঘটনা মাতিয়ে রেখেছিল সকলকে
এর পরের গল্পের নায়ক লুধিয়ানার এক যুবক। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই বাবার শালের ব্যবসায় সাহায্য করতে শুরু করেন অঙ্কুশ কক্কর। ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য কাউকে বেতন দিয়ে রাখার মতো সামর্থ্য ছিল না অঙ্কুশের বাবার। স্কুলের পর তাই বাবার দোকানে গিয়ে বসতেন অঙ্কুশই। বাবার হাতে হাতে কাজ করে দিতেন। এই ভাবে দু-বছর চলার পরে তাঁরা বাবা সিদ্ধান্ত নেন, এ ভাবে হবে না। ব্যবসাকে আর্থিক ভাবে দাঁড় করাতে গেলে অন্য কিছু করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই ২০০০ সাল নাগাদ লুধিয়ানার একটি বাসস্ট্যান্ডে কাছেই ধাবা খোলেন বাবা-ছেলে। অঙ্কুশ তখন ক্লাস টুয়েলভের ছাত্র। শুরু হল হাড় ভাঙা খাটনি। অল্প অল্প করে জমতে লাগল পুঁজি। আর সেই পরিশ্রমেরই ফল, সেই ছোট্ট ধাবা থেকে আজ হিমাচল প্রদেশের একটি বিরাট রিসর্টের মালিক অঙ্কুশ। প্রায় ৩৩ হাজার স্কোয়ার ইয়ার্ডের ওই পাঁচতারা রিসর্টের নাম রেখেছেন ‘ট্রিঅয়েজ’। না শুধু রিসর্টই বানাননি, পাশাপাশি অ্যাস্ট্রোলজি নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন তিনি। অঙ্কুশ এখন শহরের অন্যতম নামকরা অ্যাস্ট্রোলজারও। লুধিয়ানাতেও রয়েছে তাঁদের আর একটি হোটেল। ফলে পুঁজি থাক বা না থাক, ইচ্ছাশক্তির জোর থাকলে যে সবই সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছেন লুধিয়ানার এই তরুণ।
বাকি অংশ শুনে নিন।