সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি যে ঠিক কতখানি, ফের সে কথা প্রমাণ করে দিলেন একদল মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী নতুন প্রজন্মকে যে আত্মকেন্দ্রিক বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়, সে কথার অসারতাও যেন বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা। বরং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেই অন্য মানুষের পাশে দাঁড়ালেন তাঁরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রাজস্থানের চড়া রোদ আর গরমের মধ্যে ফুড ডেলিভারি অ্যাপের খাবার পৌঁছনোর কাজ করে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। তাও কিনা বাইসাইকেলে চড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্রেই সামনে এসেছিল এই খবর। আর সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্রেই ক্রাউড ফান্ডিং করে সুরাহা হল সমস্যার। ৭৫ হাজার টাকা চাঁদা তুলে ওই ব্যক্তিকে একটি বাইক কিনে দিলেন কয়েকজন। আর এই সবটাই সম্ভব হল কেবল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেই।
আরও শুনুন: মন্দির চত্বরেই আয়োজন ইফতারের, মুসলমান পড়শিদের আমন্ত্রণ স্বয়ং পুরোহিতের
ঠিক কী হয়েছে, তবে খুলেই বলা যাক।
গত সোমবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে একটি ছবি ভাগ করে নিয়েছিলেন আদিত্য শর্মা নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানিয়েছিলেন, সেদিন একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপে দুপুরের খাবার অর্ডার করেছিলেন তিনি। একেবারে ঠিক সময়েই খাবার পৌঁছে যায় তাঁর হাতে। আর তখনই তাঁর চোখে পড়ে, খাবার ডেলিভারি করতে আসা মানুষটি একটি বাইসাইকেলে চড়ে এসেছেন। রাজস্থানে সেদিন তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। আর সেখানে দুপুরে রোদ কতখানি চড়া থাকে, সে কথাও জানা। এহেন পরিস্থিতিতে ওই ব্যক্তিকে সাইকেল চালিয়ে কাজে বেরোতে দেখে রীতিমতো চমকে যান আদিত্য শর্মা। কথায় কথায় তিনি জানতে পারেন, মধ্যতিরিশের ওই ব্যক্তির নাম দুর্গা মীনা। তিনি ইংরেজি ভাষায় কথোপকথন চালাতে পারেন, বিকম পাশ, আবার স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনাও করতে চান। ১২ বছর ধরে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর চাকরি হারান ওই ব্যক্তি। তাই উপার্জনের তাগিদে গত চার মাস ধরে এই ফুড ডেলিভারি অ্যাপে কাজ নিয়েছেন তিনি। যদিও শিক্ষকতার স্বপ্ন এখনও ছেড়ে যায়নি তাঁকে। টাকা জমিয়ে একটি ল্যাপটপ কিনতে চান তিনি, যাতে পড়ুয়াদের অনলাইনে পড়াতে পারেন। এদিকে ফুড ডেলিভারির কাজ করার জন্য একটি বাইক কেনাও প্রয়োজন। সেজন্যও টাকা জমানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান ওই ব্যক্তি। যদিও মাত্র ১০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে এত কিছু সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। কথাপ্রসঙ্গে ওই ব্যক্তি আদিত্য শর্মাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, বাইক কেনার প্রাথমিক অর্থ তাঁকে ধার হিসেবে দিলে পরবর্তী ইএমআই-গুলি তিনি দিতে পারবেন। তা ছাড়া চার মাসের মধ্যে সেই ধার শোধ করে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আরও শুনুন: দ্রুত পৌঁছনোর প্রতিযোগিতা, গ্রাহকের চাহিদাই কি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে ‘ডেলিভারি বয়’দের?
সোশ্যাল মিডিয়াতে এই সব কথাই ভাগ করে নিয়েছিলেন আদিত্য শর্মা। আর তার উত্তরেই এগিয়ে আসেন আরও কিছু মানুষ। সমবেত প্রয়াসে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উঠে আসে ৭৫ হাজার টাকা। যা দিয়ে ওই ব্যক্তিকে একটি বাইক কিনে দিয়েছেন তাঁরা।
বাস্তবে না হোক, ভারচুয়াল জগতে একে অপরের সঙ্গে বেঁধে বেঁধে থাকার একটা পথ খুলে দিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার তৈরি করা সেই ভারচুয়াল জগতে ডুব দিয়ে বাস্তবে অন্যান্য মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন অনেকে, এমন দাবিও উঠেছে বারবার। কিন্তু এবার চোখে পড়ল একেবারে অন্যরকমের ছবি। ভারচুয়াল জগতের বেঁধে বেঁধে থাকাকে বাস্তবেই সত্যি করে তুললেন একদল মানুষ। তাও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেই।