সোশ্যাল মিডিয়াতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের ঢেউ। এক সাম্প্রতিক সমীক্ষার পরে এমনটাই জানাল একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ার কর্ণধার সংস্থা মেটা। কেবল ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্যই নয়, হিংসাত্মক পোস্টের জোয়ার নিয়েও রীতিমতো উদ্বিগ্ন এই সংস্থা। ঠিক কী জানিয়েছে মেটা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সোশ্যাল মিডিয়ার জগৎকে যতই ভারচুয়াল বলে দাগিয়ে দেওয়া হোক না কেন, বাস্তব জগতের সঙ্গে তার জলচল সীমারেখা টানা আর বোধহয় সম্ভব নয়। আর সেই কারণেই, বাস্তবের পৃথিবীটার ছায়া ক্রমশ বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে ভারচুয়ালের দুনিয়ায়। একাধিক বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জেরে যেভাবে বারবার উত্তাল হয়ে উঠছে দেশ, তারই প্রতিচ্ছবি এবার ধরা পড়ল সোশ্যাল মিডিয়াতেও। অন্তত এমনটাই জানিয়েছে মেটা।
আরও শুনুন: বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসে শাস্তির বিধান পুরুষদের, মহিলাদের নয় কেন? প্রশ্ন খোদ আদালতের
ঠিক কী জানা গিয়েছে মেটা-র পর্যবেক্ষণে?
নিছক বক্তব্য নয়, রীতিমতো তথ্য পরিসংখ্যান সহ এ কথা জানিয়েছে মেটা। সোশ্যাল মিডিয়ার গতিপ্রকৃতি লক্ষ করে নিয়মিত রিপোর্ট তৈরি করে এই সংস্থা। আর তেমনই একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ইদানীং কালে সোশ্যাল মিডিয়াতে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে বিদ্বেষমূলক এবং হিংসাত্মক মন্তব্য। শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই ফেসবুকে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। ইনস্টাগ্রামে হিংসাত্মক পোস্টের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ। আর এই মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহল। তাও এই রিপোর্টে সামগ্রিক চিত্র উঠে আসেনি বলেই মনে করছেন তাঁরা। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার পাহাড়প্রমাণ পোস্টের ভিড় থেকে প্রতিটি হিংসা ও বিদ্বেষের পোস্ট খুঁজে আনা প্রায় খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতোই একটি অসম্ভব কাজ। তাহলে কীভাবে এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে কর্ণধার সংস্থা? আসলে, সোশ্যাল মিডিয়ার নিজস্ব কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বা আচরণবিধি রয়েছে। কোনও পোস্টকে আপত্তিকর মনে হলে কেউ সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। এবং তা যদি ওই কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করে, সেক্ষেত্রে পোস্টটি মুছে দেওয়া বা পোস্টদাতাকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মতো পদক্ষেপও নিতে পারে কর্তৃপক্ষ। বস্তুত, যে পোস্টগুলি সম্পর্কে এ জাতীয় অভিযোগ জমা পড়েছিল, সেগুলির ভিত্তিতেই এই সমীক্ষা করেছে মেটা। সেই পরিসংখ্যান মোতাবেক দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকের ক্ষেত্রে মার্চ মাসে যেখানে এরকম অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৩৮,৬০০, সেখানে এপ্রিলের শেষে এই সংখ্যাটা পৌঁছে গিয়েছে ৫৩,২০০-তে। আর ইনস্টাগ্রামের ক্ষেত্রে অবস্থাটা আরও উদ্বেগের। মার্চের ৪১,৩০০টি অভিযোগ পরের মাসে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। আর কেবল হিংসা বা বিদ্বেষমূলক পোস্ট-ই নয়, বিভিন্ন অসত্য ঘটনার জনরব ছড়ানো, অনলাইন জালিয়াতি, এহেন ঘটনার পরিমাণও বেড়েছে সম্প্রতি, এমনটাই জানিয়েছে সমীক্ষা।
আরও শুনুন: পৃথিবীর উপরে নেমে আসতে পারে হিংস্র ভিনগ্রহীদের আক্রমণ, সতর্ক করলেন গবেষক
সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে এই জাতীয় পোস্ট সহজেই মুছে দেওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে মানুষের মনের গভীরে যে বিষ জমে উঠেছে, তার সমাধান হবে কোন পথে? সে উত্তর বোধহয় কারোরই জানা নেই।