ওয়ানাড় খানিক নিশ্চিন্তি দেবে। এমনটাই ভেবেছিল কংগ্রেস শিবির। হয়তো রাহুল গান্ধীও। তবে, নাছোড় ‘স্মৃতি’ কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছেন না। স্মৃতি অর্থাৎ স্মৃতি ইরানির ছায়া কি এবারও নাকাল করতে পারে রাহুল গান্ধীকে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আমেঠি থেকে ওয়ানাড়। রাহুল চললে, সঙ্গে চলেন স্মৃতিও। প্রার্থী হিসাবে না হলেও, প্রার্থীর ছায়াসঙ্গী হিসাবে। আর দেশের রাজনীতির সাম্প্রতিক অতীত জানে, স্মৃতি সতত সুখের নয়, রাহুল গান্ধীর জন্য তো নয়ই।
‘আমেঠি’ তো যাকে বলে ছিল কংগ্রেসের ঘরের মাঠ। সঞ্জয়, রাজীব হয়ে সোনিয়া এবং শেষে রাহুল। হাত-এ হাত মিলিয়ে কয়েক দশক দিব্যি ছিল আমেঠি। ২০০৪ আর ২০০৯ সালে দাপটেই জয় হাসিল করেছিলেন রাহুল। সিঁদুরে মেঘ দেখা দিল ২০১৪-তে। সেবারই প্রথম শুরু হল রাহুল-স্মৃতি দ্বৈরথ। প্রথম ম্যাচে অবশ্য পরাজিত হন স্মৃতি, তবে মাত্র লাখ খানেকের ভোটে। কংগ্রেসের খাস গড়ে বিজেপি যেভাবে নিজের মার্জিন বাড়িয়েছিল, তাতে রাজনীতির কাঁটা যে দ্রুত ঘরতে চলেছে, তা অনুমান করা শক্ত ছিল না। ২০১৯-এ এসে তা পুরোপুরি ঘুরে গেল। এবার আর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা নয়, ম্যাচ জিতেই নিলেন স্মৃতি ইরানি। আর তারপরেই এসেছিল তাঁর সেই আইকনিক উক্তি- ‘কে বলে আকাশের গায়ে ছিদ্র থাকতে পারে না!’ ছিদ্র যে ছিল তা ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট। বিজেপির কাছে এই জয় ছিল রীতিমতো যখের ধন। রাহুল গান্ধীকে ঘরের মাঠে হারিয়ে দেওয়ার অর্থ কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতার দিকেই মস্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া। আর সেই গুপ্তধনের সন্ধান দিয়েছিলেন লড়াকু স্মৃতি ইরানিই। শুরু হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় রাজনীতিতে নয়া ডার্বি রাহুল বনাম স্মৃতি।
আরও শুনুন:
Bharat Nyay Yatra: ন্যায়ের জন্য হাঁটা আসলে ‘ধর্মযাত্রা’! আদৌ কি বোঝাতে পারবেন রাহুল?
আমেঠির ভূত এবার রাহুলকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ওয়ানাড়ে। সেখান থেকে জিতেই ২০১৯-এ সংসদে যান রাহুল। তার পর রাজনীতির গঙ্গা-যমুনা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। এখন দুয়ারে ২০২৪-এর লোকসভা। বলা হচ্ছে, দেশের জন্য এবারের নির্বাচন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। কোনও নির্বাচনই অবশ্য গুরুত্বহীন নয়। তবে, এবারের নির্বাচনের মাহাত্ম্য খানিক আলাদা। পদ্ম শিবিরের দাবি, যেভাবে তারা আগামীর ভারতকে কল্পনা করছে, সেই রূপরেখা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে এবারের নির্বাচনের জয়। আর বিরোধী তথা কংগ্রেসের বক্তব্য হল, দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো যদি অক্ষুণ্ণ রাখতে হয়, তাহলে এই ভোটে বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রেক্ষিতেই নয়া গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছে এবারে নির্বাচন। আর সেখানেও রাহুল বনাম স্মৃতির ডার্বি একেবারে মিলিয়ে যাচ্ছে না।
আরও শুনুন:
পতি-পত্নীর ভিন্ন রাজনৈতিক মত থাকতে পারে না? প্রশ্ন ছিল খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরই
কংগ্রেসের বিচারে, ওয়ানাড় নিরাপদতম আসন। আগেও রাহুল সেখানে জিতেছিলেন। রাহুল নিজেও তা বলেন। মনোনয়ন দাখিল করে তাই বলেছেন, ওয়ানাড় তো আমার ঘর-ই। তবে, সেই ঘর যে শান্তিনিকেতন নয় তা-ও বোধহয় জানেন। এমনিতে ওয়ানাড়ে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক বেশ শক্তপোক্ত। মোট বাসিন্দাদের ৩২ শতাংশ মুসলিম, এবং ১৩ শতাংশ খ্রিস্টান। কংগ্রেসের আশা, এই ভোট রাহুলের পক্ষেই যাবে। বিজেপির অঙ্কও হয়তো সে-কথাই বলছে। পদ্ম শিবিরের প্রার্থী হিসাবে যাঁকে ভাবা হয়েছে, সেই কে সুরেন্দ্রণের ভোটের ট্র্যাক রেকর্ড তেমন বলার মতো কিছু নয়। তবে তিনি সংগঠন চালাতে দক্ষ, জেলা সামলানোর ভারও তাঁর উপর আছে। আর সোনায় সোহাগা হয়ে থাকছেন সেই স্মৃতি ইরানি। সুরেন্দ্রণ জানিয়েছেন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে থাকছেন স্মৃতি ইরানি। এ অবশ্য নেহাত পাশে থাকার ব্যাপার নয়। রাহুল বনাম স্মৃতির দ্বৈরথকেই উসকে দিতে চাইছে বিজেপি শিবির। সম্মুখসমর না হলেও, স্মৃতির উপস্থিতি ভোটের হাওয়া খানিক ঘোরাতেই পারে। অতএব সাম্প্রতিক অতীতের সবথেকে চর্চিত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্মৃতি জনতার মনে ছড়িয়ে দিতে একটুও দ্বিধা করেনি তারা। স্মৃতি নিজেও ওয়ানাড় নিয়ে রাহুলকে নানা আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন, প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছেন। অর্থাৎ খানিকটা মেঘনাদের মতোই এবার রাহুলের সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন স্মৃতি। জয়-পরাজয় ভবিষ্যতের বিষয়। তবে, দক্ষিণেও ‘স্মৃতি’ যে পিছু ছাড়ছে না রাহুলের, সে লড়াই উপভোগ্যই হবে রাজনীতিতে।