মেয়েদের অপমান করে বাড়তি কোন সুবিধা হয় রাজনৈতিক নেতাদের? রাহুল গান্ধীকে খোলা প্রশ্ন ছুড়েছেন গায়িকা সোনা মহাপাত্র। ঐশ্বর্য রাইকে নিয়ে নেতার সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই এই প্রশ্ন তাঁর। সত্যি বলতে, গায়িকা যে প্রশ্ন করেছেন, গোটা রাজনৈতিক শিবিরের কাছে এই প্রশ্ন রাখতে চায় হয়তো সারা দেশই।
একসময় খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে শুনতে হয়েছিল ‘ইতালীয় নর্তকী’ মন্তব্য। বর্ষীয়ান নেত্রীকে এহেন কটাক্ষে বিঁধতে ছাড়েননি বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্রনারায়ণ সিং। অথচ সম্প্রতি দেখা গেল, সোনিয়া-পুত্র রাহুলই বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে নাচ নিয়ে কটাক্ষ করে বসলেন আরেক নারীকে। রাম মন্দির রাজনীতি নিয়ে মোদি-সহ বিজেপির দিকে তোপ দেগেছিলেন তিনি, কিন্তু তার মধ্যেই ঐশ্বর্য রাইকে টেনে এনেছেন কংগ্রেস সাংসদ। যে মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছে বিজেপি। আর এবার সেই ইস্যুতেই রাহুল গান্ধীকে খোলা প্রশ্ন ছুড়লেন গায়িকা সোনা মহাপাত্র। প্রশ্ন তুললেন, রাজনৈতিক নেতারা যে বারবার তাঁদের বক্তব্যে মেয়েদের নিচু করেন, তাতে তাঁদের কী সুবিধা হয়? হ্যাঁ, নারীবিদ্বেষের মানচিত্রে খানিক বাড়তি নম্বর যোগ হয় বটে, কিন্তু আর কী-ই বা হয় তাতে?
আরও শুনুন:
রামকে ‘পৌরাণিক’ বললে অপমান! শিক্ষিকাকে বরখাস্ত কি মগজে কারফিউ জারিরই চেষ্টা?
বর্তমান ইস্যুতে রাহুলের মূল বক্তব্য ছিল জাতপাতের রাজনীতি নিয়ে, যেখানে আপাতদৃষ্টিতে ঐশ্বর্য রাই কোথাও নেই। সম্প্রতি যোগীরাজ্য প্রয়াগরাজে পৌঁছেছিল রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা। যে রাহুল ভোটের আগে বারে বারেই জাতশুমারি ও জাতিগত সংরক্ষণ নিয়ে সরব হচ্ছেন, তিনি সেখানেও তথাকথিত নিম্নবর্গের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বিজেপি সরকারকে একহাত নিয়েছেন- এমনটা হওয়ারই ছিল। কিন্তু এই প্রসঙ্গেই তিনি বললেন, রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে কজন দলিত বা তফশিলি মানুষকে দেখা গিয়েছে? দেখা গিয়েছে অমিতাভ বচ্চন বা ঐশ্বর্য রাইকে। এখানেই শেষ নয়, এর পরেও ফের বলি-তারকার নাচের প্রসঙ্গ টেনেছেন রাহুল। এবার ক্ষোভ উগরে দিয়ে সেই মন্তব্যের পালটা দিলেন সোনা মহাপাত্র। রাহুলকে উদ্দেশ্য করে গায়িকা আরও বলেছেন, “অতীতে আপনার মা কিংবা বোনকেও নিশ্চয়ই কেউ একইভাবে ছোট করেছিলেন।”
আরও শুনুন:
মোদি-জমানা বোঝার চেষ্টা, ঢল নেমেছে নতুন বইয়ের, নতুন লেখকদেরও
সত্যি বলতে, রাহুলকে বিঁধে এ কথা বললেও, সোনা মহাপাত্র কিন্তু ভুল বলেননি। সত্যি সত্যিই রাজনৈতিক পরিসরে মেয়েদের প্রতি অবমাননা, যৌন অসম্মানসূচক মন্তব্য নতুন নয়। এর আগে দেখা গিয়েছে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ‘স্কার্টওয়ালি বাই’ বলা বিজেপির কাছে জলভাত। আবার রাফাল বিতর্কে নরেন্দ্র মোদির বদলে নির্মলা সীতারমণ উত্তর দিলে রাহুলই বলেছেন, ‘ছাপান্ন ইঞ্চি চওড়া বুকের প্রধানমন্ত্রী এক মহিলার পিছনে লুকিয়ে পড়েছেন’। ভোটের আগে নির্বাচনী প্রচারে অনেকসময়ই বিরোধী পক্ষকে তোপ দাগতে গিয়ে নেতানেত্রীরা এমন কথা বলে বসেন, যা আসলে মেয়েদের প্রতি অবমাননাকর। ঘৃণাভাষণের থেকে এই বিষয়টি মাত্রাগত ভাবে আরও একটু আলাদা, কারণ এখানে কোনও নারীকে দেখা হচ্ছে কেবল তাঁর যৌন পরিচয়ের ভিত্তিতে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে গিয়েও, নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে এত কথার পরেও এই প্রবণতাটি যে জারি থাকছে, তা সামগ্রিকভাবে দেশের পক্ষেই খুব একটা স্বস্তির নয়।