পথে নামলে দিকনির্দেশের দায় ইন্টারনেটের, আবার জীবনে কোনদিকে এগোব, কোন পথে এগোবে আমাদের চিন্তাভাবনা, তার সূত্রও মিলে যাবে নেটদুনিয়াতেই। এই অবস্থায় পথ দেখানোর সব দায়িত্বই ইন্টারনেটের উপর ছেড়ে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে হাত গুটিয়ে বসেছি, মাথার দরজাও বন্ধ করতে পারলেই নিশ্চিন্তি। এই চোখ-কান বুজে ভরসা করার জন্য আন্তর্জাল যোগ্য পথপ্রদর্শক তো?
আমি কোন পথে যে চলি? কোন কথা যে বলি? এ যুগে হলে বোধহয় নায়ক আর সে প্রশ্ন করতেন না। আন্তর্জাল যে পথ দেখাচ্ছে, সে পথ ধরেই নাকবরাবর এগিয়ে যেতেন। কেননা নেট যা বলে, তাই তো ধ্রুব সত্যি। তারপরে নেটে দেখা সেই গলিতে ঢুকতে গিয়ে তিনি হোঁচটই খান, কি সামনে মূর্তিমান বিপদই এসে দাঁড়াক, তাতে কী! সত্যি বলতে, একালে কি তেমনটাই সত্যি হয়ে দাঁড়ায়নি? পথে নামলে দিকনির্দেশের দায় ইন্টারনেটের, আবার জীবনে কোনদিকে এগোব, কোন পথে এগোবে আমাদের চিন্তাভাবনা, তার সূত্রও মিলে যাবে নেটদুনিয়াতেই। এই অবস্থায় পথ দেখানোর সব দায়িত্বই ইন্টারনেটের উপর ছেড়ে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে হাত গুটিয়ে বসেছি, মাথার দরজাও বন্ধ করতে পারলেই নিশ্চিন্তি। তারপর গড্ডল প্রবাহের মতোই, নেট যা দেখাবে পা সহজাত প্রক্রিয়ায় সেদিকে গুটিগুটি এগিয়ে চলবে, এই তো! কোনও ইন্টারনেট না থেকেই ভেড়ার দল যে অভ্যাস আয়ত্ত করেছিল, আধুনিক সভ্যতার এই আবিষ্কার হাতে পেয়ে আমরাও সেই অভ্যাসকেই দাসখত লিখে দিয়েছি। হাতে ইন্টারনেট, মগজে কারফিউ।
আরও শুনুন:
ভোটের বাজারে জোর ছুটছে বন্ড-এ-ভারত
কথাটা উঠেছিল বাস্তবিক এক পথ দেখানোর কথা নিয়েই। আগেকার দিনে পথ না চিনলে আপনি কী করতেন? খানিক নিজেরই বুদ্ধি খাটিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেন কোন পথে যাওয়া যায়। তাতেও না কুলোলে পথে কোনও এক বা একাধিক লোককে জিজ্ঞেস করতেন। এই যে ধরুন, আদ্যানাথের মেসোর ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে আমড়াতলার মোড় থেকে কোথায় না কোথায় পৌঁছে দিলেন সুকুমার রায়। সেখানে পথের হদিশ দেখা গেল পথই জানে। কিন্তু পথের খোঁজখবর নিতে গিয়ে মানুষে মানুষের এই সংলাপ, নানাভাবে জুড়ে থাকাই তো পথের পাঁচালি বুনে তোলে। কিন্তু একালে আমাদের হাতে আছে ফোন, তাতে আছে নেট, আর তার সূত্রে ম্যাপ খুলে রাস্তা খুঁজতেই আমরা অভ্যস্ত। যদিও কখনও কখনও গলিঘুঁজির মধ্যে, কিংবা গ্রাম মফস্সলের মেঠো রাস্তায় সে ম্যাপ নিজেই পথ হারিয়ে ফেলে। সাম্প্রতিক কালে এমনও দেখা গিয়েছে যে, জলেডোবা রাস্তায় নেমে পথের বদলে নদীতে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে সে, জলে ডুবে ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। এবার অনলাইন ম্যাপের এই দাদাগিরি রুখতেই কর্নাটকের এক এলাকায় পদক্ষেপ করেছেন স্থানীয়রা। সেখানে অনলাইন ম্যাপের এমন কিছু পথ ভোলানোর ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। তারপরেই তাঁরা সে রাস্তায় কয়েকটি সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন। কোনোটিতে লেখা, গুগল আপনাকে বোকা বানাচ্ছে! কোথাও লেখা, গুগল ভুল বলছে!
আরও শুনুন:
হোক না ‘কৃত্রিম পুরুষ’, রোবটের হাত তবু নারীর শরীরই ছুঁতে চায়!
আসলে আন্তর্জাল যা বলে, তা যে সবসময় সত্যি নয়, এ কথাটিই তো আমাদের মাথায় রাখা প্রয়োজন। সে গুগল ম্যাপই হোক, কি হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি, ভ্রান্ত তথ্য মিলতে পারে যে কোনও জায়গা থেকেই, কারণ সেই তথ্য সরবরাহ করছে কোনও না কোনও মানুষই। আর সে মানুষ জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে, কোনও উদ্দেশ্য রেখে বা না রেখেও তথ্যবিকৃতি ঘটাতে পারে। নেটদুনিয়ার বাড়বাড়ন্তের যুগে ভুল তথ্য বা বিকৃত তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়া খুব সহজ। আর সেই কারণেই কাকে কান নিয়ে গিয়েছে শুনলেই কাকের পিছনে না ছুটে আগে কানটা আছে কি না দেখে নেওয়া দরকার। তা না দেখলে আপনার ক্ষতি, আবার কাককে অহেতুক মারতে ছুটলে ক্ষতির ভাগিদার হতে হবে বেচারা কাকটিকেও। আজকাল মাঝে মাঝেই ধর্মের কারণে যে অশান্তি উসকে ওঠে, পরে অনেকসময়ই দেখা যায় তার নেপথ্যেও রয়েছে নেটদুনিয়ায় ছড়ানো এমন কোনও জল্পনা। নেটের দেখানো পথকে চোখকান বুজে ভরসা করলে যে সব ক্ষেত্রেই সমস্যা বাড়তে পারে, তা দেখা গিয়েছে বারে বারেই। এরপরেও পথ হারানোর মরিয়া ইচ্ছে নিয়েই আমরা পথে নামব কি না, সে কথা কি ভেবে দেখার সময় হয়নি?