লক্ষ্মণরেখা ভাঙলে মেয়েদের আর পুরোনো ঠিকানায় ফেরার উপায় থাকে না। রামায়ণের আমল থেকেই সে কথা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বারবার। সম্প্রতি প্রেমের টানে যে পাক বধূ ঘর ছেড়েছিলেন, তাঁর ক্ষেত্রেও সত্যি হল সে কথাই। ভারতে আসা ওই তরুণীকে আর ফেরত নিতে চায় না তাঁর পরিবার। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভেসে গিয়েছিলেন প্রেমের জোয়ারে। আর তাতে খড়কুটোর মতোই উড়ে গিয়েছিল পরিবার পরিজন সংসার ধর্ম সবকিছুর বাধা। এমনকি মুছে গিয়েছিল দুই দেশের কাঁটাতারও। কোনও বিপত্তির তোয়াক্কা না করেই ভারতে প্রেমিকের কাছে ছুটে এসেছিলেন পাক তরুণী সীমা হায়দার। কোনও আইনকানুনকে পাত্তা না দিয়েই লুকিয়ে এক দেশ থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন অন্য দেশে। সেই কারণে ভারতে পৌঁছলেও জেলে যেতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এইসবের মধ্যে একেবারেই মুছে গিয়েছে তাঁর ফেরার পথ। প্রথমে অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছেই তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য আরজি জানিয়েছিলেন তরুণীর স্বামী। কিন্তু এখন গোটা পরিবারের মুখেই উলটো সুর। আগের জীবনকে নাকচ করে নতুন যে জীবনে ওই তরুণী পা রেখেছেন, সেখানে যাই বিপদ আসুক না কেন, তাঁকে আর পুরনো জীবনে ফিরতে দিতে চায় না তাঁর পরিবার। তার কারণ? পরিবারের দাবি, ধর্ম বদলে গিয়েছে ওই তরুণীর। তিনি আর মুসলিম নেই। সুতরাং কোনও পরিস্থিতিতেই সেই পরিবারে আর ঠাঁই হবে না তাঁর।
আরও শুনুন: ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু হলে শাড়ি পরে থাকব’, বিতর্কিত মন্তব্য মুসলিম নেতার
অনলাইনে গেম খেলার সূত্রে ২২ বছরের সচিন মিনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সীমার। নয়ডার বাসিন্দা ওই যুবক ধর্মে হিন্দু। এদিকে সীমা ধর্মে মুসলিম, পাকিস্তানের কট্টর পরিবেশেই তাঁর বাস। বছর তিরিশ বয়সের এই তরুণী বিবাহিতা, চার সন্তানও রয়েছে তাঁর। কিন্তু প্রেম কি আর অত কিছু মানে! এমনিতে কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে যাতায়াত করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু পাসপোর্ট ভিসার পরোয়া না করেই ভারতে পালিয়ে আসেন সীমা। সঙ্গে নিয়ে আসেন নিজের চার সন্তানকেও। কিন্তু বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশের জেরে ওই পাক তরুণীকে আটক করে পুলিশ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দৌলতে এ কথা জেনে আগেই মোদি সরকারের কাছে স্ত্রীকে ফেরানোর আরজি জানিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। এদিকে সীমা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী গুলাম হায়দার পেশায় রাজমিস্ত্রি, থাকতেন সৌদিতে। অধিকাংশ সময় একাই থাকতে হত তাঁকে। তাঁর স্বামী তাঁর উপরে অত্যাচার করতেন বলেও দাবি ওই পাক তরুণীর। এই পরিস্থিতিতে সীমা সাফ জানিয়েছেন, প্রেমিকের জন্য হিন্দু ধর্মেই ধর্মান্তরিত হতে চান তিনি। আর পাকিস্তানেও তিনি আর ফিরতে চান না।
আরও শুনুন: ফের ২৬/১১ দেখবে ভারত! পাক বধূকে না ফেরালে হামলা, গেম-প্রেম কাণ্ডে হুমকি মুম্বই পুলিশকে
যদিও সীমা এ কথা বলার পরেও প্রাণনাশের হুমকি এসেছে তাঁর কাছে। ওই তরুণীকে পাকিস্তানে না ফেরালে হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ করা হবে, এমনকি হামলা হবে ভারতেও, এমন হুমকিও এসেছে। কিন্তু এবার অন্য সুরে কথা বলল তরুণীর পরিবারই। তিনি যে সমাজের চলতি বিধি ভেঙেছেন, তাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না পাকিস্তানের কট্টরপন্থী পরিবার ও তাদের পড়শিরা। এমনকি সীমা যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, তার মালিকের নাবালক পুত্রের দাবি, সন্তানদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিন ওই তরুণী। তবে তিনি ভারতেই থেকে যান। তিনি এখন আর মুসলিম নেই, দাবি সকলের। হিন্দু যুবকের সঙ্গে তরুণীর প্রেম, এবং পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ ওই এলাকার বাসিন্দারা। যে যাই বলুক না কেন, ওই তরুণীকে যে তাঁরা আর কোনও মতেই মেনে নেবেন না , সে কথাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁরা।