অতিমারী পর্ব পেরিয়ে সদ্য হাল ফিরেছে সিনে ইন্ডাস্ট্রির। এই নতুন পর্যায়ে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে ২৫০ কোটির গণ্ডি। যদিও ছবি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক এবং রাজনৈতিক জলঘোলা হয়েছে। এখনও তার শেষ নেই। এবার এই ছবিকে উপলক্ষ করেই শাসকদলকে বিঁধলেন শারদ পাওয়ার। কী তাঁর বক্তব্য? আসুন শুনে নিই।
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ছবি মুক্তির আগে থেকেই ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে নানা তর্ক দানা বাঁধছিল। মুক্তির পর তো মতামতের ঢেউ বয়ে যায়। নানারকমের বিতর্ক ছবিটির ব্যবসার পালে বেশ ভালো হাওয়াই দিয়েছে। ২৫০ কোটির গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে ছবিটি। রাজনৈতিক মহলেও ছবিটি নিয়ে জোর চর্চা। কেননা ছবির বিষয়টিই রাজনৈতিক। কাশ্মিরী পণ্ডিতদের উপর আক্রমণ এবং তাঁদের উচ্ছিন্ন হওয়ার গল্পই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই এ ছবি দেখায় উৎসাহ দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। অন্যদিকে বিরোধী শিবিরের দাবি, অনৈতিক ভাবে ছবির প্রচার করা হচ্ছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ করেছিলেন, কাশ্মিরী পণ্ডিতদের যন্ত্রণাকে সামনে রেখে কেউ কেউ ব্যবসা করছেন, আর বিজেপি নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে। তিনি নিজে এই ক্ষেত্রে ছবি না বানিয়ে, পণ্ডিতদের ভূমি ফিরিয়ে দিতে সচেষ্ট হতেন। কেন ছবিটিকে বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে করমুক্ত করা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এই মন্তব্যের জেরে তাঁর বাসভবনে হামলাও হয়। অর্থাৎ কাশ্মীর ফাইলস ছবিটি যে এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে, তা বলাই যায়।
আরও শুনুন: মন্দির চত্বরেই আয়োজন ইফতারের, মুসলমান পড়শিদের আমন্ত্রণ স্বয়ং পুরোহিতের
এবার যেন তা আরও স্পষ্ট হল, যখন প্রবীণ নেতা এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার ছবিটিকে নিয়ে মন্তব্য করলেন। ঠিক কী বললেন শরদ? প্রবীণ এই নেতা বলছেন, “একজন একটি ছবি বানিয়েছে, যেখানে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের কাহিনি দেখানো হয়েছে। আসলে এর থেকে বোঝা যায় যে, সংখ্যালঘু সবসময় আক্রান্ত হয়।” অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য হিন্দুরা এই ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ছিল বলেই আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এই পর্যন্ত বলেই থেমে থাকেননি তিনি। তিনি জানিয়েছেন, “এখন যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা যে এ ছবিকে বাহবা দিয়েছেন, প্রমোট করেছেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।” প্রবীণ নেতা দেশের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে আরও জানিয়েছেন, “হিন্দু-মুসলমানের নাম করে দেশের ঐক্য ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে এখন। যাঁরা সমাজকে রক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন, এখন সেই সব সমমনোভাবাপন্ন মানুষকে এক হতে হবে।”
আরও শুনুন: দেশরক্ষাই ধর্ম, রমজান পালনের মধ্যেও কর্তব্যে অবিচল ইউক্রেনের মুসলমান সৈনিকরা
শরদ পাওয়ারের এই মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও এ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। ছবিটিকে বিজেপি নেতারা যেভাবে সমর্থন করেছেন, তার সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, “কাশ্মীরে বহু মানুষই আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য নেতারা যদি ছবির জন্য না খেটে কাশ্মিরী পণ্ডিতদের জন্য সত্যি কিছু করতেন, তাহলে আজ পরিস্থিতি অন্যরকম হত।” অরবিন্দ কেজরিওয়াল তো বরাবরই ছবি এবং ছবি ঘিরে বিজেপির রাজনীতির সমালোচক। অর্থাৎ একদিকে কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে যেমন বিজেপি এককাট্টা, তেমনই এই এক ছবিকে কেন্দ্র করে বিরোধীরাও মিলছেন এক সুরে। বিজেপির সম্মিলিত প্রচার, একাধিক রাজ্যে কর মকুবের ঘটনা যেমন একটা দিক, তেমনই উলটো দিকের ছবিটা, অর্থাৎ বিরোধীদের এক বিন্দুতে এসে মতের মিল হওয়াটাও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এই ইস্যুতে প্রবীণ নেতা শরদ পাওয়ারের যোগদান তাই গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।