বিগত চার বছরের মোদি জমানায় আশ্চর্যজনক ভাবে কমেছে ছাত্রীদের স্কুলছুটের হার। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করল কেন্দ্র সরকার। তাহলে কি নারীশিক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরি করা কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি সর্বাঙ্গীণ ভাবে সফল? কী বলছে তথ্য? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশে নারীশিক্ষার হার এখনও উল্লেখযোগ্য ভাবেই কম। মেয়েদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে একরকম অনীহা এখনও জিইয়ে রেখেছে অনেক পরিবারই। কন্যাসন্তান মানেই যেন এক অবাঞ্ছিত বোঝা, এমনই মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যায় তাদের মধ্যে। আর সেই প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতেই ‘বেটি বচাও, বেটি পড়াও’, প্রকল্প শুরু করেছিল কেন্দ্রের মোদি সরকার। আর কেন্দ্রের নারীকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলিরই সুফল মিলছে এবার বলে দাবি করল প্রশাসন। নজরে পড়ার মতো কমল স্কুলছুট ছাত্রীর হার। এমনটাই জানিয়েছে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বিগত চার বছরে ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সি স্কুলছাত্রীদের মধ্যে অনেকটাই কমেছে স্কুলছুটের হার। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরে এই প্রকল্প সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়েছে বলেই মনে করছে কেন্দ্র।
আরও শুনুন: জন্ম ১৯৫৬ সালে, একের পর এক ‘কেলেঙ্কারি’র পর্দাফাঁস, কোন বলে এত শক্তিশালী ইডি?
সম্প্রতি নারীশিক্ষা বিষয়ে তথ্য পরিসংখ্যান সহ একটি রিপোর্ট সংসদে পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী। মোদি মন্ত্রিসভার মিনিস্টার অফ স্টেট ফর এডুকেশন পদে আসীন অন্নপূর্ণা ওই রিপোর্টে দুটি শিক্ষাবর্ষের তুলনা করে দেখিয়েছেন, বর্তমানে দেশে ছাত্রীদের মধ্যে স্কুলছুটের হার কীভাবে কমেছে। তথ্য অনুযায়ী নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীদের স্কুলছুটের হার ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ছিল ১৮.৪ শতাংশ। কিন্তু ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সেই হার প্রায় পাঁচ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৭ শতাংশ। একইসঙ্গে কমেছে প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক শ্রেণিগুলিতে ছাত্রীদের স্কুলছুটের হারও। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, সেখানে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রীদের স্কুলছুটের হার ছিল ৩.৩ শতাংশ, যা ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ০.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্ষেত্রে এই হার ৫.৬ শতাংশ থেকে নেমে গিয়েছে ২.৬ শতাংশে।
বাল্যবিবাহের কারণে অনেক সময়ই পড়া বন্ধ হয়ে যায় মাধ্যমিক পড়ুয়া ছাত্রীদের। সেখানে নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীদের স্কুলছুটের হার এতখানি কমে যাওয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই দেখছে কেন্দ্রের শিক্ষা দপ্তর। কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিভাগের সমগ্র শিক্ষা অভিযানকেই অবশ্য এর কৃতিত্ব দিয়েছেন অন্নপূর্ণা দেবী। ছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করে তোলার জন্য বিনামূল্যে স্কুলের পোশাক, বইখাতা দেওয়ার পাশাপাশি মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া, স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন বসানোর মতো কর্মসূচিগুলির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
যদিও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের স্কুলে আসার হার সম্পর্কে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি এই প্রতিবেদনে। তবুও দেশজুড়ে বিভিন্নভাবে জারি থাকা লিঙ্গবৈষম্যের মধ্যে এই খবর যে একচিলতে আশার আলো, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।