যে আইন মহিলাদের সুরক্ষা, ন্যায্যতা এনে দিত পারত তা কেন অপব্যবহারের অস্ত্র হয়ে উঠল, তা বোধহয় খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। নইলে জরুরি ক্ষেত্রে আইন যে তার ধার হারাবে, সে আশঙ্কা থেকেই যায়।
যে আইন মহিলাদের সুরক্ষা দিতে পারে, তার অপব্যবহার হচ্ছে! আর তা অনেকাংশে হচ্ছে মহিলাদের হাতেই? প্রশ্ন উঠেছিল। বেঙ্গালুরুর আইটি কর্মীর আত্মহত্যার প্রসঙ্গেই উঠেছিল। সম্প্রতি আবার একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি। যখন এক বিচ্ছেদ মামলায় ৫০০ কোটি টাকা খোরপোশের দাবি উঠল। এবং আবারও শীর্ষ আদালত সতর্ক করল আইনের অপব্যবহার প্রসঙ্গে।
দিনকয়েক আগেই আইটি কর্মী অতুল সুভাষের আত্মহত্যার ঘটনা খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল। আদালত এ বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। বিচারপতি বি ভি নাগরত্না এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বরের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল যে, ৪৯৮-এ ধারার অপব্যবহার হচ্ছে। কী এই ধারা? গার্হস্থ্য হিংসার ক্ষেত্রে মহিলাদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করে এই ধারা। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ ছিল, যে আইন মহিলাদের বর্ম হয়ে উঠতে পারত, দিনেদিনে তা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা পূরণের একটি অস্ত্র হয়ে উঠেছে। তা যে সামগ্রিক ভাবে মহিলাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়, সেদিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল আদালত।
আরও শুনুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার পুরুষ! আইনের অপব্যবহার কি কমজোরি করবে নারীদের অধিকার?
সেই ঘটনার মাত্র কিছুদিন পরেই আবার সেই একই কথা বলতে বাধ্য হল শীর্ষ আদালত। এক্ষেত্রেও নেপথ্যে আছে এক বিচ্ছেদ মামলা। কোভিডের সময় অনলাইন ম্যাট্রিমনি পোর্টালের মাধ্যমে দু’জনের দেখা হয়। তারপর বিয়ে। তবে, সে বিয়ের বন্ধন বেশিদিন টিকল না। ফলত অবধারিত বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন তাঁরা। তবে ফয়সালা দ্রুত হয়নি। কারণ একটাই,খোরপোশের অঙ্ক। মহিলার আইনজীবীর দাবি ছিল,এই মামলায় স্বামীর সম্পত্তি পরিমাণের নিরিখেই খোরপোশ চাওয়া হচ্ছে, এবং সেই অঙ্কটি হল ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এদিকে স্বামী খোরপোশ দিতে রাজি হলেও, এই বিপুল অঙ্কের টাকা দিতে রাজি হননি। এইখানেই মামলাটি অন্য গুরুত্ব পেয়ে যায়। শুধুমাত্র বিচ্ছেদ মামলা নয়, ৪৯৮-এ ধারাটিকে কীভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার একটি উদাহরণ হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও তাই এসেছে শীর্ষ আদালতের সতর্কবার্তা। এই দম্পতির বিচ্ছেদ মঞ্জুর করার পাশাপাশি, শীর্ষ আদালত বেশ কিছু পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে, যা পরবর্তী মামলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। স্বামী এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে আইনের অস্ত্র প্রয়োগ করার প্রবণতা বাড়ছে বলেই অভিযোগ ওঠে। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে এই বিষয়টি নিয়ে দু’বার মত প্রকাশ করতে বাধ্য হল আদালত। ফলত সেই অভিযোগের সারবত্তা যে আছে, তা বলাই যায়। এবং সেক্ষেত্রেই আদালতের এই সতর্কবার্তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
তবে, যে আইন মহিলাদের সুরক্ষা, ন্যায্যতা এনে দিত পারত তা কেন অপব্যবহারের অস্ত্র হয়ে উঠল, তা বোধহয় খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। নইলে জরুরি ক্ষেত্রে আইন যে তার ধার হারাবে, সে আশঙ্কা থেকেই যায়। আদালত নিজের মত প্রকাশ করছে বটে, তবে এ বিষয়ে সচেতনতা আর কাণ্ডজ্ঞান থাকা জরুরি সাধারণ মানুষেরই।