আল্লা ছাড়া কারও সামনে মাথা নোয়ানো নাকি ধর্মে নিষেধ। এই যুক্তিতেই সম্প্রতি ‘বন্দে মাতরম’ উচ্চারণ করতে অস্বীকার করেছিলেন সমাজবাদী পার্টির এক মুসলিম নেতা। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। এবার সেই কথার পালটা দিলেন কংগ্রেসের এক মুসলিম নেতা। তাঁর দাবি, কোরানে এমন কোনও কথাই বলা নেই। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন শুনে নিই।
ধর্মে তিনি মুসলিম। তাই ‘বন্দে মাতরম’ উচ্চারণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। ধর্মের দোহাই দিয়ে সম্প্রতি এমনই মন্তব্য করেন মহারাষ্ট্রের এক সমাজবাদী নেতা। এদিকে বন্দে মাতরম কথাটি তো কোনও রাজনৈতিক স্লোগান নয়, তা এ দেশের জাতীয় স্তোত্র হিসেবেই স্বীকৃত। ফলে এ দেশেরই কোনও রাজনৈতিক নেতা কেন সেই শব্দ উচ্চারণ করতে নারাজ, এই ইস্যুতে রীতিমতো সুর চড়িয়েছিল প্রতিপক্ষ দল। তার উপরে সপা ‘ইন্ডিয়া’ নামে নয়া বিজেপিবিরোধী জোটের অন্যতম শরিক। তাই জোটের প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে পালটা দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। এবার জোট শরিক কংগ্রেসের থেকেও কটাক্ষের সুর শোনা গেল এই ইস্যুতে। ওই সমাজবাদীর নেতার যুক্তি যে ধর্মসম্মতও নয়, সম্প্রতি তেমনটাই দাবি করলেন কংগ্রেসের এক মুসলিম নেতা। কোরানের উল্লেখ করে তাঁর দাবি, ইসলাম ধর্মগ্রন্থে এমন কোনও বিধিনিষেধের কথা বলাই হয়নি।
আরও শুনুন: বলতে হবে ‘জয় শ্রীরাম’, ইমামকে গেরুয়া চাদর পরিয়ে নির্দেশ, যোগীরাজ্যের ঘটনায় ফের বিতর্ক
ঘটনার সূত্রপাত আওরঙ্গাবাদের এক অশান্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এই ইস্যুতে বক্তব্য রাখতে গিয়েই বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন সমাজবাদী নেতা আবু আজমি। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ওই বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। সেখানে তাঁকে স্পষ্ট বলতে শোনা যায়, মুসলিম হয়ে আল্লা ছাড়া কারও সামনে মাথা নত করা সম্ভব নয়। আর এই নির্দেশ তাঁর ধর্মেই রয়েছে, দাবি আজমির। এমনকি তাঁরা নিজের মায়ের কাছেও মাথা নত করেন না বলে দাবি ওই নেতার। তাঁর আরও সংযোজন, কেউ কেউ বলে থাকেন ভারতে থাকতে হলে বন্দে মাতরম বলতেই হবে। কিন্তু এমনটা তিনি কখনই করতে পারবেন বলেও সাফ জানিয়ে দেন। নিজের বক্তব্যের এই ভিডিও পোস্ট করার পাশাপাশি, ক্যাপশনে ওই একই কথা লেখেন তিনি। বুঝিয়ে দেন, মুসলিম বলেই তাঁর পক্ষে বন্দে-মাতরম উচ্চারণ সম্ভব নয়, কারণ তা ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী।
আরও শুনুন: সত্যিই গুপ্তচর! পাক বধূর বেনামে ভারতে প্রবেশ নিয়ে দানা বাঁধছে সন্দেহ
তাঁর এই মন্তব্যের পর রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে সেদিনের অধিবেশন। অন্যান্য শিবিরের বিধায়করা একযোগে আজমির বিরুদ্ধে সরব হন। একসময় অধ্যক্ষ সভা মুলতুবি করতে বাধ্য হন। কিন্তু বিতর্ক থামেনি তাতেও। ইন্ডিয়া জোটের প্রসঙ্গ টেনেই সমাজবাদী নেতাকে তুলোধোনা করেন গেরুয়া শিবিরের এক নেতা। তা ছাড়া স্রেফ রাজনৈতিক তর্কযুদ্ধ নয়, আজমি তাঁর মন্তব্যে যেভাবে সরাসরি ইসলামের প্রসঙ্গ জড়িয়েছেন, তা মোটেও ভালভাবে নেননি বিরোধী শিবিরের মুসলিম নেতারা। মহারাষ্ট্রের প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সহ সভাপতি হুসেন দালওয়াই সমাজবাদীর নেতার ওই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর কথায়, ইসলামে এমন কিছুই উল্লেখ নেই, যা একজন ভারতীয় মুসলিমকে বন্দে-মাতরম উচ্চারণে বাধা দেয়। বরং তাঁর দাবি, একজন মুসলিমের সবসময় তাঁর মাতৃভূমিকে সম্মান জানানো উচিত। কংগ্রেস নেতার কথায়, ইসলাম তাঁদের ধর্ম আর বন্দেমাতরম সংস্কৃতির অংশ। তাই এর মধ্যে কোনও বিধিনিষেধ থাকতে পারে না। সেইসঙ্গে তিনি, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। বন্দেমাতরম অস্বীকার করার অর্থ তাঁদের সংগ্রামকে মান্যতা না দেওয়া, এমনটাই মনে করেছেন তিনি। শুধু তিনি একা নন, এই মন্তব্যে সায় দিয়েছেন রাজনৈতিক মহলের আরও অনেক মুসলিম ব্যক্তিত্বই। তাঁরা সকলেই একযোগে দাবি করেছেন, কোরানে কখনোই এই ধরনের নিষেধের উল্লেখ নেই। সব মিলিয়ে এহেন মন্তব্যের জেরে আপাতত খানিক ব্যাকফুটেই ওই সমাজবাদী নেতা।