বাতাসে ভাসছে বারুদের গন্ধ। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের ছবিটা এখন এরকমই। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের ওপ্রান্তে যাঁরা দাঁড়িয়ে, তাঁদের অবস্থা ঠিক কেমন? কী ভাবছেন রুশ সেনারা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
টেক্সট মেসেজে মার সঙ্গে কথা বলেছিলেন এক রুশ সেনা। তাঁদের কথোপকথন থেকে স্পষ্ট, মা আদৌ জানতেন না যে ছেলেকে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। তিনি বরং জানতেন, ট্রেনিংয়ে গিয়েছে ছেলে। প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর সরব হয়েছেন রাশিয়ার বহু সেনার মায়েরা। তাঁদের দাবি, সামরিক মহড়ার জন্য ইউক্রেন সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর পর সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দেওয়া হয়েছে তাদের। ইউক্রেনের পরিস্থিতি কেমন, সে সম্পর্কে যে কোনও ধারণাই ছিল না তাঁদের, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ওই সেনা।
আরও শুনুন: রাশিয়া আক্রমণ করতেই তড়িঘড়ি বিয়ে, একসঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিলেন ইউক্রেনের নবদম্পতি
দেখতে দেখতে ছ-দিনে পা রাখল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিদেশি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এমনকি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন সাধারণ নাগরিকেরাও। কিন্তু যারা আক্রমণকারী, সেই রুশ সেনাবাহিনীর মনোভাব ঠিক কেমন? আক্রান্ত দেশের মানুষদের কাছে তাঁরা ভিলেন হয়ে দাঁড়িয়েছেন বটে। কিন্তু তাঁরাও কি সবাই যুদ্ধের পক্ষে? এই সেনার কথায় এবার সেই প্রশ্নেরই উত্তর পাওয়া গেল।
আরও শুনুন: ‘যুদ্ধ বন্ধ করো!’ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে ভিডিও বার্তা খুদের
মাকে নিজের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন এই সেনা। বলতে দ্বিধা করেননি যে ভয় করছে তাঁর। যে কাউকে, এমনকি নিরীহ নাগরিকদের আঘাত করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের বলা হয়েছিল, ইউক্রেনের মানুষ স্বাগত জানাবেন তাঁদের। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা ঠিক বিপরীত। রুশ বাহিনীর গাড়িগুলির সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন ইউক্রেনের মানুষ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নাগরিকদের চোখে এই সেনারা ফ্যাসিস্ট ছাড়া আর কিছু নন। যে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করেছিল রাশিয়া, আজ তার নিজের বাহিনীর ভাগ্যেই জুটেছে একই তকমা। এহেন কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ওই সেনা বলেছিলেন, নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে তাঁর। মা অবশ্য তখনও জানতেন না যে, সেই কথাই সত্যি হয়ে দাঁড়াবে। এই কথোপকথনের কিছুক্ষণ পরেই যুদ্ধে নিহত হন ওই সেনা।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে তাঁর ওই শেষ কথাগুলি পড়ে শোনান ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে চার হাজারেরও বেশি রুশ সেনা। রাশিয়ার ভিতরেই যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠছে বারবার। সেই প্রতিবাদেই নতুন মাত্রা যোগ করল নিহত রুশ সেনার শেষ কথাগুলি।