“তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ করো?” প্রশ্ন করেছিলেন এক কবি। পরের মুহূর্তেই তাঁর সপাট তিরস্কার ছিল, বুড়ো খোকারা যে গোটা একটা দেশ ভেঙেচুরে ভাগ করতে চায়, তার বেলা? এবার সেই প্রশ্নই যেন তুলল এই ছোট্ট খুকু। ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার সামনে দাঁড়িয়ে ধমকে দিল যুদ্ধবাজদের। কী বলল সে? শুনে নিন।
চুরি হয়ে গিয়েছে শৈশব। যাদের দুনিয়ায় এতদিন কেবল রং পেন্সিল, চকোলেট, খেলনা আর বেলুনের আনাগোনা ছিল, এখন তাদের ঘুম ভেঙে যায় সাইরেনের তীব্র শব্দে। কেঁপে উঠে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে খুদেরা। বাড়িঘর কাঁপতে থাকে বোমা বিস্ফোরণে। বহুতলের দিকে ধেয়ে আসে মিসাইল। বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। হ্যাঁ, এখন এমনভাবেই শঙ্কার প্রহর গুনছে ইউক্রেন। ছোটদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বন্ধ খেলার মাঠ, পার্ক, আনন্দ উৎসব, সবকিছুই। মাটির তলার বাঙ্কারে ঠাসাঠাসি করে লুকিয়ে থাকছে কেউ কেউ। নিরাপদ আস্তানার খোঁজে অন্য দেশে পাড়ি দিতে পেরেছে কেউ কেউ, ফেলে যেতে হয়েছে প্রিয়জন, প্রিয় ঘর, আর যা কিছু প্রিয় ছিল। আসলে যুদ্ধ মানে তো কেবল প্রাণহানি নয়, কেবল সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নয়, যুদ্ধ মানে এক বিপুল ওলটপালট। ছোট থেকে বড়, সকলের উপরেই তার আঁচ এসে লাগে। আর সেইজন্যই ইউক্রেনের এই সংকটে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন গোটা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষেরা। যুদ্ধ নয়, শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়াতে। সেই মিছিলে নয়া সংযোজন এক খুদের ভিডিও বার্তা।
আরও শুনুন: মৃত্যুর পরেও ফুল ফুটবে, রুশ সেনাকে সূর্যমুখী ফুলের বীজ দিয়ে কটাক্ষ ইউক্রেনের মহিলার
ঠিক কী বলেছে লিলি নামের সেই ছোট্ট মেয়েটি?
না, যুদ্ধ কেন হয়, পাওয়ার আর পলিটিক্সের সম্পর্কটা ঠিক কেমন, এত সব ভারী ভারী কথার কিছুই সে জানে না। কিন্তু আধো আধো বুলিতে সে জানিয়েছে, সে নিজে কী চায়। বলেছে, “I want peace on Earth, not pieces of Earth”। পৃথিবীতে শান্তি চায় সে। খণ্ড খণ্ড হয়ে যাওয়া পৃথিবী সে দেখতে চায় না। তাই সে মনে করিয়ে দিয়েছে বিশ্বভ্রাতৃত্বের কথাও, বলেছে, আমরা সবাই ভাই বোন। শুধু ভাল কথায় কাজ নাও হতে পারে ভেবে শেষটায় একটু বকেই দিয়েছে সে। আঙুল তুলে জোর গলায় বলেছে, ‘যুদ্ধ বন্ধ করো!’
আরও শুনুন: ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে কতটা বদলাবে ভারত-রাশিয়া-আমেরিকার সম্পর্কের সমীকরণ?
যুদ্ধের নেশায় যারা মত্ত, তাদের কানে এই আর্তি পৌঁছবে কি না জানে না ছোট্ট মেয়েটি। কিন্তু পৃথিবীর অনেক মানুষকেই ছুঁতে পেরেছে তার এই বার্তা। লিলির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। যুদ্ধে অশান্ত পৃথিবীতে এই যে আরও কিছু মানুষ বেঁধে বেঁধে থাকলেন, এই কি কম কথা, বলুন?