ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ হন সাধারন মানুষ। আইনের পথে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সেই কাজ করেন বিচারপতিরা। তাই বলে, সুপ্রিম কোর্ট কখনই সংসদের বিরোধী দল নয়। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এমনই মন্তব্য করলেন প্রধান বিচারপতি। ঠিক কোন প্রসঙ্গে একথা বললেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সুপ্রিম কোর্ট আসলে জনতার আদালত। যার একমাত্র দায় ন্যায় বিচার। রায় কারও পক্ষে যাবে, কারও বিপক্ষে। তাই নিজের স্বার্থের কথা ভেবে শীর্ষ আদালতের কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যায় না। এমনটাই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
আরও শুনুন:
খুলল চোখের বাঁধন! লেডি জাস্টিসের সঙ্গেই কি বদলে গেল দৃষ্টির অর্থ?
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেছেন তিনি। আগামী নভেম্বরেই বিচারপতি পদ থেকে অবসর নেবেন চন্দ্রচূড়। তার আগে আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন জনতার আদালতের ধারণা। তাঁর কথায় শীর্ষ আদালত আসলে মানুষের আদালত। ভবিষ্যতেও আদালতের এই ভূমিকাই থাকবে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আদালতকে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হবে। চন্দ্রচূড়ের মতে, বর্তমান সময় বিভাজন আরও স্পষ্ট। এমন মানুষের সংখ্যা কম নেই, যারা মনে করেন সুপ্রিম কোর্ট একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখানে একটা শর্ত আছে। শীর্ষ আদালতের কাজ বা পদক্ষেপ অবশ্যই তাঁদের পক্ষে যেতে হবে। অন্যথায় আদালতের কার্যপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দুবার ভাবেন না এঁরা। এই প্রবণতাকেই অত্যন্ত বিপজ্জনক মনে করছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর মতে, কোনও একটি ঘটনার রায় দেখে সুপ্রিম কোর্টের সামগ্রিক কার্যপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমীচীন নয়। প্রতিটা ঘটনার আলাদা ব্যাখ্যা থাকে। আদালত কী রায় দিচ্ছে, কেন রায় দিচ্ছে তার অবশ্যই নির্দিষ্ট কারণ থাকে। আইনের বাইরে কেউ নন। এক্ষেত্রেও আইনের পথেই সিদ্ধান্ত নেন বিচারপতিরা। আইনই সে ক্ষমতা তাঁদের দিয়েছে। সুতরাং মানুষ যদি সেই রায় মেনে নেয়, তাহলেই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত সুরক্ষিত। এমনটাই মনে করছেন প্রধান বিচারপতি।
আরও শুনুন:
দুনিয়া দেখার চোখ বদলে দিয়েছে বিশেষভাবে সক্ষম দুই কন্যাই, মানলেন চন্দ্রচূড়
তবে তিনি এও বলেন, প্রশ্ন তোলার অধিকার সকলের রয়েছে। ভুল ধরিয়ে দেওয়ায় কোনও বাধা নেই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রায় ব্যক্তির বিরুদ্ধে গেলেই আদালতের কাজকে ভুল বলা হচ্ছে। এমনটা একেবারেই অনুচিত। রায় কী হবে তার উপর নির্ভর করে আদালতের সামগ্রিক কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না। এই প্রথম নয়, বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এর আগেও সরব হয়েছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। কিছুদিন আগে তাঁর বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন প্রশ্নের মুখে ঠেলেছিল বিচারব্যবস্থাকে। সেই নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। সম্প্রতি আদালতে লেডি অফ জাস্টিসের মূর্তিও বদলানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তাতেও শোরগোল পড়েছে বিভিন্ন মহলে। সব ক্ষেত্রেই অবশ্য উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এবার সংসদের বিরোধী দলের প্রসঙ্গ টেনে শীর্ষ আদালতের কথা বললেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। বুঝিয়ে দিলেন ভবিষ্যতের জন্য কেন প্রয়োজন এই প্রতিষ্ঠান। একইসঙ্গে স্পষ্ট করলেন, মানুষের আদালতের ধারণাও।