সরকারি স্কুলের নামে কোনও জাত বোঝানো যাবে না। সম্প্রতি এক মামলার শুনানিতে এমনই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এতে পড়ুয়াদের উপর প্রভাব পড়বে। ঠিক কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে এমন নির্দেশ আদালতের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সরকারি আবাসিক স্কুল। অথচ নামের মধ্যে রয়েছে বিশেষ জাতির উল্লেখ। এতেই আপত্তি জানিয়েছেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতিরা। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে কেন জাতের উল্লেখ থাকবে, এই প্রশ্নই তুলেছেন তাঁরা। একইসঙ্গে ওই স্কুলের নাম বদলেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
:আরও শুনুন:
বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব নতুন নয়, স্বাধীনতার আগে থেকেই জারি বাংলা ভাগের দাবি
ঘটনার কেন্দ্রে তামিলনাড়ুর কলভারায়ন পাহাড় এলাকার কিছু সরকারি স্কুল। আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় কিছুদিন আগেই বিষমদ খেয়ে প্রায় ৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাতে রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। এই নিয়ে মাদ্রাজ আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। তাতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি ওই এলাকার কিছু স্কুলের নাম নিয়ে আপত্তি তোলেন তাঁরা। আসলে, এইসব স্কুলের নাম হিসেবে লেখা ছিল, ‘গর্ভমেন্ট ট্রাইবাল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’ বা ‘সরকারি আদাবাসী আবাসিক বিদ্যালয়’। এতেই বিচারপতিদের প্রশ্ন, কেন স্কুলের নামে ‘ট্রাইবাল’ বা ‘আদিবাসী’ শব্দটি থাকবে? এতে পড়ুয়াদের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে বলেই মনে করছেন তাঁরা। তাই অবিলম্বে নাম বদলানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
:আরও শুনুন:
আকবরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন হিন্দু রাজা! কার রাজত্বে হয়েছিল এমন কাণ্ড?
এ বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও জাতি বা সম্প্রদায়ের নাম থাকলে, পড়ুয়ারা নিজেদের পৃথক মনে করতে পারে। এক্ষেত্রে যেমন স্কুলের নামে আদিবাসী লেখা হয়েছে। তাতে এখানকার পড়ুয়ারা মনে করতেই পারেন, যে তাঁরা আদিবাসী বলে অন্যদের থেকে আলাদা। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কারও মনে এই ধরনের ভাবনা তৈরি হওয়া অত্যন্ত ‘বেদনাদায়ক’ বলেও মনে করেছেন বিচারপতিরা। তাই আদালত কখনই সরকারি বিদ্যালয়ের নামে জাতি বা সম্প্রদায়ের উল্লেখকে সমর্থন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। এ বিষয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্য সচিবকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। স্কুলের নামে কোনও বিশেষণ যোগ করার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন বিচারপতিরা। স্রেফ ‘সরকারি স্কুল’ লেখাই যথেষ্ট। আসলে, বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রদের কাছে মন্দির সমান। সেখানে এই ধরনের জাতি বা সম্প্রদায়ের উল্লেখ থাকলে, ছোট থেকেই ভেদাভেদের জাঁতাকলে নিজেদের জড়িয়ে ফেলবে পড়ুয়ারা। একইসঙ্গে জীবনের আসল অধ্যায় শুরুর আগেই নিজেদের পৃথক করে রাখার মনোভাব তৈরি হবে অনেকের মনে। তাতে আখেরে সমাজের ক্ষতি। তাই বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের নামে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত।