খানিকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই রেপো রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। লক্ষ্য, নগদের জোগান কমিয়ে চাহিদা খানিকটা কমানো এবং তার দরুণ মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি বড় প্রভাব পড়তে চলেছে ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রেও। বর্ধিত রেপো রেটের ভিত্তিতে, এই মূহূর্তে লোন নেওয়া বা ফিক্সড ডিপোজিট করার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কী করণীয়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এক ধাক্কায় প্রায় ৪০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট বাড়িয়েছে আরবিআই। প্রায় চার বছর পর এই রেট বাড়ানোর প্রাথমিক কারণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি কমানোর লক্ষ্যকেই। করোনাকালীন ক্ষয়ক্ষতি এবং পরবর্তীতে যুদ্ধ-আবহে যেভাবে মূল্যবৃদ্ধি মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছিল, তাতে এই সিদ্ধান্ত একরকম অবধারিত ছিল বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। তবে আশঙ্কাও কিছু থাকছে। মনে করা হচ্ছে, বৃদ্ধির এই হয়তো সূত্রপাত। অর্থাৎ রেপো রেট আগামীতে হয়তো আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ভবিষ্যতে অর্থনীতি কোন পথে চলবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না। তবে যা বলা যায়, তা হল, এই বৃদ্ধির দরুণ বড় প্রভাব পড়তে চলেছে ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে।
আরও শুনুন: বোনকে কোলে নিয়েই স্কুলে, খুদের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে শিক্ষার ভার নিলেন মন্ত্রী
যাঁরা ইতিমধ্যেই ঋণ নিয়েছেন তাঁদের উপর কী প্রভাব পড়বে, আগে তা শুনে নেওয়া যাক। রেপো রেট বাড়ার দরুণ ব্যাঙ্ক লোনের উপর সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হবে। যার অর্থ বাড়বে ইএমআই-এর পরিমাণ। ধরা যাক কেউ ২০ বছরের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন। বর্তমান সুদের হার ৬.৮ শতাংশ ধরলে এই লোনের উপর ইএমআই হয় ২২, ৯০০ টাকা। এখন সুদের হার বাড়ার দরুণ বর্ধিত সুদের হার হবে ৭.২ %। অর্থাৎ এখন সম্ভাব্য ইএমআই হবে ২৩, ৬২০ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৭২০ টাকা বাড়ছে ইএমআই।
আরও শুনুন: সঙ্গে পিঁয়াজ রাখলে গরম কম লাগে! চলতি ধারণার নেপথ্যে আসল সত্যিটা কী?
এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে দুটি জিনিস। বেশ কিছু লোন দেওয়া হয় ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেটে। সেক্ষেত্রে এই বর্ধিত রেপো রেটের কোনও প্রভাব গ্রহীতার উপর পড়বে না। কার লোন বা পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে হোম লোনের মতো কিছু লোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফ্লোটিং ইন্টারেস্ট রেট। ২০১৯ সালে ১ অক্টোবরের থেকে ব্যাঙ্কগুলি হোম লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে সূচক হিসাবে আরবিআই-এর রেপো রেটকে ধরেই এগিয়েছে। এই ক্ষেত্রে রেপো রেট বাড়ার অর্থ, ইএমআই-এ পরিবর্তন আসা। অর্থাৎ ২০১৯-এর অক্টোবরের পর যাঁরা ফ্লোটিং ইন্টারেস্টে লোন নিয়েছেন তাঁদের বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। এক্ষেত্রে যদি সম্ভব হয়, তাহলে লোন শোধের সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে। তাতে ইএমআই-এর পরিমাণ খানিকটা কমার সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ সাময়িক কিছুটা স্বস্তি মিললেও মিলতে পারে। যদিও ঋণগ্রহীতার জন্য তা মোটেও সুবিধাজনক নয়। কারণ সময়সীমা যত বাড়বে তত লোনের নিরিখে পরিশোধ যোগ্য অর্থের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। অন্যদিকে যাঁরা লোন নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁরা এখনই লোন নিয়ে নিতে পারেন। কেননা সুদের হার এরপর বাড়তে থাকলে সেই চাপ গ্রহীতার উপর এসে পড়বে।
আরও শুনুন: শিব সেনার আদর্শ থেকে সরেছেন উদ্ধব! বাল ঠাকরের বক্তৃতা শুনিয়ে তোপ রাজের
যাঁরা ফিক্সড ডিপোজিট করার কথা ভাবছেন, তাঁদেরকে স্বল্প সময়ের জন্য ডিপোজিটের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। মনে করা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতি হিসাবে স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয়ে সুদের হার কিছুটা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে কম সুদের হারে টাকা দীর্ঘদিন ফিক্সড ডিপোজিট না-করাই ভালো। এফডি পুনর্ণবীকরণের ক্ষেত্রেও আপাতত স্বল্পমেয়াদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোনো উচিত বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের পরামর্শ, সুদের হার কতটা বাড়ল বা কমল, সেই হিসাব কষে পরবর্তীতে মেয়াদ বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।
অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরবিআই, তা মধ্যবিত্তের সাধারণ জীবনেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। সেক্ষেত্রে যে কোনও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত সাবধানে বুঝেশুনে এবং সুদের হারের দিকে চোখ রেখে নেওয়ারই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।