নয়া সংসদ ভবনের অধিবেশনে বিরোধী দলের সাংসদকে ধর্ম তুলে কটূক্তি করেছেন বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি। যা নিয়ে সেভাবে কোনও নিন্দা আসেনি দলের তরফেও। এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার লোকসভার বক্তব্যে অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে এই বিজেপি নেতাকে। কী ঘটেছিল তখন? শুনে নেওয়া যাক।
সম্প্রতিই ঘৃণাভাষণ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক করেছিল দেশের শীর্ষ আদালত। কিন্তু বিচারপতির সাফ হুঁশিয়ারির পরেও কি নিজেদের সংযত করেছেন রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা? সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বিজেপি নেতার সাম্প্রতিক কটূক্তি ফের সেই বিতর্কই উসকে দিল। উত্তরপ্রদেশের বহুজন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ দানিশ আলিকে সরাসরি ধর্ম তুলে আক্রমণ করেছেন বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি। জানা গিয়েছে, চন্দ্রায়নের সাফল্য নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন দানিশ, সেই সময়েই সহ-সাংসদকে অসংসদীয় ভাষায় আক্রমণ করে বসেন রমেশ। যা নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পরে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বটে, তবে না দল, না স্পিকার, কাউকেই এখনও পর্যন্ত ওই বক্তব্যের নিন্দা করতে শোনা যায়নি। এর আগে হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে নূপুর শর্মা এবং নবীন কুমারকে বহিষ্কার করেছিল বিজেপি, কিন্তু একাধিকবার বেফাঁস মন্তব্য করলেও রমেশের বিরুদ্ধে কখনোই কড়া শাস্তির পথে হাঁটেনি দল। আর সেই কারণেই প্রশ্ন উঠছে, কে এই রমেশ বিধুরি? বিজেপির কাছে ঠিক কী কারণে গুরুত্বপূর্ণ তিনি?
আরও শুনুন: মন্ত্রীদের কথাবার্তায় লাগাম টানুক তাঁদের দলই, মত বিচারপতি নাগরত্নের
জানা যাচ্ছে, দক্ষিণ দিল্লির সাংসদ রমেশ আসলে দলের নির্ভরযোগ্য সেনা। পার্টির যে কোনও কর্মসূচিতে লোক জড়ো করাই হোক, দিল্লির একাধিক আসনে হারজিত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেই হোক, তাঁর ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই বিজেপির। আর শুধু বিজেপিই নয়, আরএসএস-এর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তাঁর। এহেন প্রভাবের কারণেই রমেশকে বড় গুরুত্ব দিয়ে থাকে দল। এর আগেও কুরুচিকর মন্তব্যের দায়ে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে রমেশের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে মহিলাদের প্রতি অপমান এবং যৌন অবমাননামূলক মন্তব্যের দায়ে তৎকালীন স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের কাছে রমেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন পাঁচ মহিলা সাংসদ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসের রঞ্জিত রঞ্জন, তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব, এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে, তৃণমূলের অর্পিতা ঘোষ এবং বাম নেত্রী পিকে শ্রীমতী টিচার। ২০১৭ সালেও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে একইরকম অসম্মানজনক মন্তব্য করেছিলেন এই বিজেপি নেতা। সেখানে বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতীকেও তিনি বিঁধতে ছাড়েননি। ২০১৯ সালেও কেজরিওয়ালের প্রতি তাঁর আক্রমণের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন আপ নেতা রাঘব চাড্ডা। তবে তাতেও থামানো যায়নি রমেশকে। সম্প্রতিই বানভাসি দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে আপ সরকারকে তোপ দেগেছিলেন তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘বামন দুর্যোধন’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন রমেশ।
আরও শুনুন: একমুখ দাড়ি-গোঁফ নিয়েই প্রকাশ্যে, রাহুল গান্ধীর নতুন রূপের নেপথ্যেও কি রাজনৈতিক বার্তা?
রাজনৈতিক নেতামন্ত্রীদের বক্তব্যে ঘৃণাভাষণের ছড়াছড়ি নিয়ে বারেবারেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। এমনকি অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার বন্ধ করার জন্য কিছু শব্দকে নিষিদ্ধ বলেও ঘোষণা করেছিল সংসদ কমিটি। এই ঘৃণাভাষণ রুখতে ‘কোড অফ কনডাক্ট’ চালু করার কথা উঠলেও, বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে সেই আরজি নাকচ করে দিয়েছিলেন সুপ্রিম বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন। তবে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রত্যেক মানুষের যেমন বাকস্বাধীনতা আছে, তেমনই সংবিধান মোতাবেকই কারও এমন কোনও মন্তব্য করার অধিকার নেই, যার জেরে অন্য সহনাগরিকের সম্মানহানি হয়। কিন্তু শীর্ষ আদালতের সেই সতর্কতা সত্ত্বেও যে জারি রয়েছে ঘৃণাভাষণ, সে কথাই আরও একবার বুঝিয়ে দিল সংসদের এই সাম্প্রতিক বিতর্ক।