NCERT-র রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সিলেবাস থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে বাবরির অস্তিত্ব। নয়া সিলেবাসে এর উল্লেখ, ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট কাঠামো হিসেবে। সেইসঙ্গে পুরনো পাঠ্যক্রমে থাকা রামমন্দির আন্দোলনের ব্যাখ্যাতেও বদল এনেছে NCERT। কেন্দ্রীয় পাঠক্রমের এই বদল নিয়েই ক্ষুব্ধ খোদ রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত। ঠিক কী বলছেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে তৈরি হয় রামমন্দির। সেই নিয়ে উন্মাদনা ছড়িয়েছিল গোটা দেশে। যদিও, ভোটের আগে মন্দির প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিই দেখেছিলেন বিরোধীরা। ভোটের পরও এই নিয়ে কম চর্চা হয়নি। কারণ রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করেও অযোধ্যায় হারের মুখই দেখতে হয়েছে বিজেপিকে। এবার সেই রামমন্দিরকে কেন্দ্র করেই তৈরি হল নতুন বিতর্ক।
আরও শুনুন: ঈশ্বরকে নিয়ে ঠাট্টা করা যায় বইকি! যুক্তি দিলেন খোদ ধর্মগুরু
রামমন্দির আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে কর সেবকদের নাম। ১৯৯২ সালে এঁরাই অযোধ্যার মাটি থেকে বাবরির অস্তিত্ব মোছার কাজ শুরু করেন। রাতারাতি উধাও হয় মসজিদ। কিন্তু সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা হবে কি না সেই নিয়ে টালমাটাল চলে দীর্ঘদিন। ঘটনার জল গড়ায় আদালত অবধি। সেখানেই বিচার চলে। শেষমেশ মন্দির গড়ার অনুমতি মেলে। তৈরি হয় রাম মন্দির। এই মুহূর্তে অযোধ্যার রামমন্দির চত্বরে গেলে বোঝা দায়, এখানে একসময় মসজিদের মতো কিছু ছিল।
আরও শুনুন: রামের জন্য ব্যবসা বেড়েছিল, বিজেপির হারে জোর ধাক্কা! নতুন সংকটে গোটা অযোধ্যা
বিজেপি জমানায় তৈরি এই মন্দির নিয়ে চর্চা চলেছে গোটা বিশ্বে। তবে চর্চার কেন্দ্রে থাকুক স্রেফ মন্দির, এই ভাবনাতেই কেন্দ্রীয় পাঠক্রম থেকেও বাবরির নাম মুছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। এতদিন দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইতে বাবরি মসজিদ প্রসঙ্গে লেখা ছিল মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মির বাকি তা নির্মাণ করেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অধীন স্বশাসিত সংস্থা এনসিইআরটি-এর তরফে যে নয়া সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে বাবরি মসজিদের নাম মুছে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি কাঠামো। যা শ্রীরামের জন্মস্থানের উপর তৈরি করা হয়েছিল। এই কাঠামোর ভেতরে ও বাইরে হিন্দুদের নানা চিহ্ন ও প্রতীক স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাওয়া যায়, এমনটাও লেখা থাকছে নয়া সিলেবাসে। পাশাপাশি অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি আন্দোলন সম্পর্কেও বেশ কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে।
আর এতেই আপত্তি প্রকাশ করেছেন রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাস মহারাজ। তাঁর দাবি, রাম মন্দির আন্দোলন সম্পর্কে নতুন সিলেবাসে যা লেখা হয়েছে তা অসম্পূর্ণ। অযোধ্যা বিতর্কে পুরনো সিলেবাসে উল্লেখ করা ছিল, ১৯৮৬ সালে মসজিদের তালা খোলার পর আদালতের নির্দেশে দুপক্ষকেই তাঁদের ধর্মীয় আচার পালনের অনুমতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি পুরানো সিলেবাসে ছিল এই মসজিদ ঘিরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কথা। একইসঙ্গে ১৯৯২ সালে করসেবক দ্বারা বাবরি ধ্বংস এবং ১৯৯৩ সালে সাম্প্রদায়িক হিংসারও উল্লেখ ছিল পুরনো পাঠ্যে। নয়া পাঠ্যে এত তথ্য নেই। বাবরিকে ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট কাঠামো হিসেবে উল্লেখ করে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কীভাবে মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল বা এই সময়ের যাবতীয় ঘটনার উল্লেখ সেইভাবে রাখা হয়নি নয়া পাঠ্যে। এতেই ক্ষুব্ধ রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তাঁর আক্ষেপ, এইটুকু পড়ে রামমন্দির আন্দোলন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা তৈরি হবে না। শুধু তাই নয়, কবে থেকে সেখানে রামলালা পূজিত হয়ে আসছেন সে তথ্যও নয়া সিলেবাসে নেই। তাই এই সিলেবাসে পড়ুয়ারা অসম্পূর্ণ তথ্য জানবে বলেই মনে করছেন সত্যেন্দ্র মহারাজ।