বলা যেতে পারে, পুরোহিত তৈরির স্কুল। হ্যাঁ, সেই লক্ষ্যেই এই বেদ বিদ্যালয়গুলিকে পরিচালনা করে রাজ্য সরকার। তবে কোনও বিজেপিশাসিত রাজ্য নয়। কংগ্রেসশাসিত রাজস্থানেই রমরমিয়ে চলছে এমন ২৬টি সরকারি স্কুল। সনাতন ধর্ম রক্ষার তাগিদেই এহেন উদ্যোগ, মত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সনাতন ধর্ম রক্ষা করার জন্য গেরুয়া শিবিরের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা প্রায়শই সামনে আসে। কিন্তু এ যেন উলটপুরাণ। বিজেপি বা সংঘ নয়, হিন্দু ধর্ম রক্ষা করার জন্য সরকারি তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কংগ্রেস সরকারের পক্ষ থেকেই। হ্যাঁ, এমনই ছবির সাক্ষী রাজস্থান। যার মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস শিবিরের অশোক গেহলট। কংগ্রেসশাসিত এই রাজ্যেই রীতিমতো সরকারি উদ্যোগে চলছে একাধিক স্কুল, যেখানে ছাত্রদের কেবলমাত্র হিন্দু ধর্ম এবং ধর্মীয় আচার নিয়েই শিক্ষা দেওয়া হয়। হিন্দু পুরোহিত গড়ে তোলার লক্ষ্যে গোটা রাজ্যে এমন ২৬টি স্কুল চালাচ্ছে রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার।
ঠিক কী পরিকাঠামো রয়েছে এই স্কুলগুলিতে?
আরও শুনুন: রমজান মাসেই ভাঙা পড়ল ২৫০ বছরের পুরনো মসজিদ-সংলগ্ন মাদ্রাসা, শুরু বিতর্ক
স্কুলগুলির পোশাকি নাম বেদ বিদ্যালয়। প্রত্যেকটি স্কুলেই বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ পায় ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সের ছেলেরা। তবে আধুনিক স্কুলের মতো বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করার কোনও সুযোগ এখানে নেই। বেদ বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম একেবারেই সনাতন ধর্ম কেন্দ্রিক। কেবলমাত্র ধর্মীয় পুথি, শাস্ত্র পুরাণ, মন্ত্র- এইসবই নিষ্ঠাভরে চর্চা করতে হয় ছাত্রদের। পাশাপাশি শিখতে হয় যাগযজ্ঞের নিয়মকানুন আর হিন্দুধর্মের যাবতীয় আচারবিচার। ভোর সাড়ে চারটেয় ওঠা থেকে রাত দশটায় শুতে যাওয়া- এই গোটা সময়টাই কড়া নিয়মে বেঁধে দিয়েছে বেদ বিদ্যালয়গুলি। এই ছাত্রদের সমস্ত জীবনটাই আবর্তিত হয় ধর্মকে ঘিরেই। কারণ ‘পণ্ডিত’, অর্থাৎ সনাতন ধর্ম বিশেষজ্ঞ হওয়াই তাদের লক্ষ্য। বেদ বিদ্যালয়ের পীতাম্বরা ছাত্র গোবিন্দ মিশ্র যেমন জানাচ্ছে, তার বাবা এবং ঠাকুরদা দুজনেই পণ্ডিত। বংশের ধারা মেনেই এই পথে চলছে সে। এই বিদ্যালয় পর্যায়ে কঠোর পরিশ্রম করে বেদ মাতার সেবা করতে হবে, এমনটাই মনে করে সে। তার আরও মত, এই প্রজন্মের আরও বেশি করে সনাতন ধর্মের প্রতি আগ্রহী হওয়া উচিত।
আরও শুনুন: সংখ্যালঘু তোষণ করছে বিজেপি! চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে কর্মীদের গোমূত্র পানের নির্দেশ উদ্ধবের
সনাতন ধর্মের প্রতি এই ঝুঁকে থাকার প্রবণতা দেখেই আসলে এদিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে সরকারও। এমনকি ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেটে মানবকল্যাণের খাতে বরাদ্দ কমলেও, হিন্দু ধর্ম ও ধর্মীয় বিষয়ের খাতে বড়সড় ব্যয়বরাদ্দ রেখেছে গেহলট সরকার। এমনিতেই ২৬টির মধ্যে ৮টি স্কুল খোলা হয়েছে ২০১৮ সালের পরে, অর্থাৎ যখন গেহলট সরকার গদিতে বসেছে। এবার নতুন করে আরও ১৩ জেলায় বেদ বিদ্যালয় খোলার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে এই রাজ্যে। বিজেপির হিন্দুত্ববাদের মোকাবিলা করতেই এইভাবে হিন্দুত্ব-ঘেঁষা পথে হাঁটছে কংগ্রেস, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।