গ্রামের নিয়ম মেনে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল শৈশবেই। মেয়েদের পড়াশোনা বা কোনও চাকরি করার চল নেই সেখানে। কিন্তু সব বাধা কাটিয়ে নিজের শর্তে নিজের জীবনকে গড়ে তুলেছেন এই তরুণী। রাজস্থানের ওই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে তিনিই প্রথম পুলিশবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই লড়াকু মেয়ের কথা।
যতই ‘বেটি বচাও বেটি পড়াও’-এর স্লোগান উঠুক না কেন, গোটা দেশে মেয়েদের সামগ্রিক ছবিটা কিন্তু সে কথা বলে না। সেই বৈষম্যেরই জলজ্যান্ত প্রমাণ বয়ে বেড়াচ্ছেন রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামের এই তরুণী। বাল্যবিবাহের শিকার ওই তরুণীর কাছে পড়াশোনার সুযোগই মেলেনি সেভাবে। কিন্তু তাতে দমে যাননি হেমলতা জাখর নামের ওই তরুণী। সামাজিক বাধা, কুসংস্কার, সংসারের চাপ, সমস্ত কিছু সত্ত্বেও নিজের স্বপ্নকে লালন করে গিয়েছেন তিনি। আর শেষ পর্যন্ত ফলও মিলেছে তার। প্রথমে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে চাকরি করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানেই থেমে যাননি ওই তরুণী। অবশেষে সে রাজ্যের পুলিশবাহিনীতে নিয়োগপত্র পেয়েছেন তিনি। ওই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কোনও পুরুষ বা মহিলা কেউই এর আগে পুলিশে যোগ দিতে পারেননি। তরুণীর এই সাফল্যে অবাক হয়ে গিয়েছে গোটা গ্রামই। নিয়োগপত্র পেয়ে প্রথমবার তিনি গ্রামে পা রাখার পর, তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়ে গ্রাম জুড়ে শোভাযাত্রা করেছেন গ্রামবাসীরা।
আরও শুনুন: একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী কেন? মুসলিম পুরুষদের বহুবিবাহ নিয়ে তোপ বিজেপি নেতার
রাজস্থানের বারমের ও জয়সলমির এলাকার সীমান্তে অবস্থিত ওই গ্রামে এখনও পুরোনো দিনের রীতিনীতিই চলে। সেখানে মেয়েদের পড়াশোনা কিংবা নিজের পায়ে দাঁড়াবার কথা ভাবে না কেউ। গ্রামের প্রথা মেনে শৈশবেই বিয়ে হয়ে যায় হেমলতারও। তাঁর বাবা পেশায় কৃষক। পরিবারেও সেভাবে পড়াশোনার চল ছিল না। কিন্তু মেয়ের সাফল্যে গর্বিত বাবা জানিয়েছেন, ওই তরুণীর প্রবল আগ্রহ ছিল পড়াশোনার প্রতি। গ্রামের সরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি অব্দি পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল না। তাতে না দমে গিয়ে ১৪ কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলে ভরতি হন ওই তরুণী। রোজ হেঁটেই সেখানে যাতায়াত করতেন তিনি। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর অবশ্য কলেজে ভরতির সুযোগ হয়নি আর। কিন্তু প্রাইভেট স্টুডেন্ট হিসেবে পড়া চালিয়ে যান তিনি। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর চাকরি পাওয়ার পরও চাকরির জন্য আরও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তরুণী, এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর বাবা। শেষমেশ ২০২১ সালের পুলিশি নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। আর সাব-ইন্সপেক্টরের নিয়োগপত্র হাতে নিয়েই প্রথমবার গ্রামে পা রেখেছেন তরুণী। তাঁর মতে, সমস্যা এলে জীবন থমকে যেতে পারে হয়তো, কিন্তু থেমে যেতে পারে না। নিজের জীবনে সে কথাই প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর সাফল্য অন্যদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে, এমনটাই আশা সকলের।