আদিবাসীদের কেন বনবাসী বলেন বিজেপি নেতারা? প্রশ্ন রাহুল গান্ধীর। কেনই বা প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ওবিসি বলে দাবি করেন? ছত্তিসগড়ে নির্বাচনের আগে জোর জমে উঠল মোদি-রাহুলের বাকবিতণ্ডা। ঠিক কী কী যুক্তিতে পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বনাম রাহুল গান্ধী! দুজনের বাকযুদ্ধ বর্তমান ভারতের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচ্য বিষয়। এবার সেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এলেন আদিবাসী এবং অনগ্রসর শ্রেণির মানুষরা। মূলত তাঁদের অবলম্বন করেই পরস্পরের দিকে কথার তির ছুড়লেন দুজনে।
আরও শুনুন: ‘ভাবী’ সারাকে নিয়ে উত্তাল গ্যালারি! অনুষ্কার মতোই কি ভবিতব্য শচীন-কন্যার?
প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। তাঁর এক ভাষণে দেশের জাত-পাতের ভেদাভেদ উড়িয়ে দিয়ে তিনি দারিদ্রকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তাঁর বক্তব্যের মূল কথাটি ছিল, জাতের বৈষম্য নয়। বরং মানুষের মুখ্য সমস্যা দারিদ্র। তাই জাতি হিসাবে যদি ভাবতেই হয়, তাহলে বাকি ভেদাভেদ ভুলে দারিদ্রকেই বৃহত্তর হিসাবে জাতি বলে ভাবতে হবে। তাঁর সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই পালটা আক্রমণ শানালেন রাহুল গান্ধী। তাঁর প্রশ্ন, যদি দারিদ্রই একমাত্র জাতি, তাহলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ওবিসি বা অনগ্রসর শ্রেণি বলে দাবি করেন কেন? রাহুলের এই প্রশ্ন তোলার ভিত্তি আছে। এর আগে মোদি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছিলেন যে, কংগ্রেস ওবিসি-দের অপমান করে থাকে। কেন তারা এই কাজ করে, সে প্রশ্নও তুলেছিলেন। আর সেই সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন নিজের প্রসঙ্গ। সেই সূত্রেই এল রাহুলের পালটা তোপ।
আরও শুনুন: মুসলিমদের কাছে ভোট চাওয়া মানেই অপমান! কেন বললেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা?
রাহুলের আক্রমণ অবশ্য এই প্রশ্নেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি তুলে এনেছেন আদিবাসী ও বনবাসী প্রসঙ্গ। তাঁর দাবি, বিজেপি নেতারা এক সময় আদিবাসীদের বোঝাতে বনবাসী শব্দটি ব্যবহার করত। কেননা তাঁরা আদিবাসীদের জায়গা বনে-জঙ্গলে বলেই ভেবে থাকেন। আর এই মানুষদের প্রতি বিজেপির মনোভাব ঠিক কেমন? উদাহরণ হিসাবে রাহুল তুলে এনেছেন মধ্যপ্রদেশের এক ঘটনা। যেখান এক আদিবাসীর মুখে প্রস্রাব করতে দেখা গিয়েছিল জনৈক বিজেপি নেতাকে। রাহুলের প্রশ্ন, কেউ কখনও দেখেছেন যে, বিজেপি নেতারা পশুর মুখে প্রস্রাব করছেন! ধারালো যুক্তি সাজিয়েই রাহুলের বক্তব্য, বনবাসী বলে বিজেপি আসলে বুঝিয়ে দিয়েছে যে আদিবাসীদের সম্পর্কে তাদের মনোভাব ঠিক কেমন। রাহুলের বক্তব্য, দুই শব্দের মধ্যে অর্থগত বিস্তর পার্থক্য আছে। আদিবাসীরাই দেশের প্রাচীন বাসিন্দা। এই সত্য স্বীকার করে নিলে, আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমির অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আদানি প্রসঙ্গ তুলে সেখানেও বিজেপিকে খোঁটা দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, আদিবাসীদের সম্পর্কে বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ তাদের কাজেই পাওয়া যায়।
রাহুল আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও বনবাসী শব্দটি ব্যবহার করতেন। তবে, সম্প্রতি আর তা করেন না। তবু তাঁর মনোভাবও যে বদলায়নি, এমনটাই রাহুলের অভিযোগ। আর সেই প্রেক্ষিতেই তিনি তুলে এনেছেন প্রধানমন্ত্রীর ‘ওবিসি’ সংক্রান্ত মন্তব্যটিকে। তাঁর প্রশ্ন, যদি দারিদ্রই মুখ্য, তাহলে মোদির সঙ্গে ওবিসি যোগ করে বক্তব্য রাখার দরকারই বা কি প্রধানমন্ত্রীর? আগামী ৭ নভেম্বর ছত্তিশগড়ে প্রথম পর্বের নির্বাচন। তার ঠিক আগে আদিবাসীদের কেন্দ্র করেই জমে উঠল মোদি-রাহুলের বাকযুদ্ধ।