গণতন্ত্রে বিরোধীর ভূমিকা অপরিসীম। নেহাত শাসককে তোপ দাগার জন্য নয়, বিরোধীদের গঠনমূলক সমালোচনা শাসককেও নতুন পথ দেখায়। আর উলটোদিকে শাসক যদি কোনও ভাল কাজ করে থাকে, তবে তা-ও স্বীকার করাই বাঞ্ছনীয়। সম্প্রতি সেই কাজটিই করলেন রাহুল গান্ধী। কী করলেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
মোদি সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ আদর্শগত। সংঘ পরিবারের আদর্শের পালটা দিতেই তিনি নেমেছেন পথে। ভারত-জোড়ো-যাত্রা করে দেশকে ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালবাসার বার্তা দিতে চেয়েছেন। সে-যাত্রায় সাড়াও মিলেছে যথেষ্ট। ভোটবাক্সে কী হবে, তা এখনই বলা না গেলেও, বিরোধী হিসাবে রাহুল গান্ধীর যে প্রায় ‘পুনর্জন্ম’ হয়েছে, তা বলাই যায়। সেই রাহুল গান্ধীর মুখেই মোদি সরকারের অন্তত দুটো কাজের প্রশংসা শোনা গেল।
আরও শুনুন: Audio Blog: অফিসের কাজে নিষ্ঠাবান হয়েও ছাঁটাই! ক্রমশ কি উভমুখী সংকটে চাকরিজীবীরা?
সম্প্রতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া বক্তৃতায় দেশের গণতান্ত্রিক সংকটকেই খোলামেলা ভাবে তুলে ধরেছেন রাহুল গান্ধী। প্রত্যাশিত ভাবেই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কর্মপদ্ধতির ক্ষুরধার সমালোচনা করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, দেশের গঠনতন্ত্রে যে আদর্শগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী, তা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। এমন এক আদর্শ মোদি দেশের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন, তা ধারণে দেশ সক্ষম নয়। এমনটাই মত রাহুলের। দেশের সংবাদমাধ্যম থেকে সংখ্যালঘুরা যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন, সে-কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। রাহুলের মুখে এ-কথা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগে বহুবার, বহু জায়গায় তিনি একই ভাবে সমালোচনা করেছেন বর্তমান সরকারের। কিছুদিন আগে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও তিনি দেশের গণতন্ত্রের যে বিপদ, তা চিহ্নিত করেছিলেন। এমনকী সংসদে তাঁকেও কথা বলতে দেওয়া হয় না বলেও দাবি করেছিলেন। বিরোধী নেতা হিসাবে শাসকের যে তিনি সমালোচনা করবেন, এর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই। তবে রাহুলের বর্তমান এই বক্তৃতা অন্য একটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা এত সমালোচনার পাশাপাশি মোদি সরকারের দুটি ভাল কাজের কথাও স্বীকার করেছেন রাহুল। প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য কী ভাল কাজ করেছেন? বক্তৃতার মধ্যে সে প্রশ্ন তোলেন রাহুল নিজেই। কিন্তু একতরফা ভাবে সব কাজকে নস্যাৎ করে দেননি তিনি। বলেছেন, অন্তত দুটি ক্ষেত্রে মোদি সরকার ভাল কাজ করেছে বলেই তাঁর মত। এর প্রথমটি হল, মহিলাদের গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া, আর দ্বিতীয়টি হল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এই দুটি কাজ যে সদর্থক, তা বিরোধী হয়েও স্বীকার করলেন রাহুল। গণতান্ত্রিক পরিবেশে বিরোধীর এই ভূমিকা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই স্বীকারোক্তিতে সে-কথাই যেন নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন রাহুল গান্ধী।