বিরিঞ্চিবাবাকে মনে আছে? যিনি নাকি খোদ সূর্যের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন? যীশু খ্রিস্ট থেকে গৌতম বুদ্ধ, সকলেই তাঁর একান্ত স্নেহভাজন। আর এইসব কথার জালে জড়িয়ে ভক্তের সব সম্পত্তি ক্রমে ক্রমে গাপ করার চেষ্টাতেই ছিলেন এই মহাপুরুষ। তিনি একাই যে এমন কাজ করেছেন তা নয় অবশ্য। বিরিঞ্চিবাবা, মছলিবাবা, দেশে দেশে কালে কালে একেক নাম আর রূপে দেখা দেন এঁরা। সম্প্রতি তেমনই পাঁচ পুরোহিতের হদিশ মিলল দেশে। কী ঘটেছে ঠিক? শুনে নেওয়া যাক।
পুলিশের জালে পুরোহিত। তাও একজন নয়, সাইবার ক্রাইমের অভিযোগে পাঁচ-পাঁচজন অর্চক তথা পূজারীর নাম উঠল পুলিশের খাতায়। ভগবানের পরম ভক্ত তাঁরা। ঈশ্বরের সেবাতেই নিবেদিতপ্রাণ। তাই জালিয়াতির সময়েও খোদ ঈশ্বরকেই জড়িয়ে নিয়েছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, ভগবানের নাম করেই ভক্তদের প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা অনুদান হাতিয়েছেন এই পুরোহিতেরা।
আরও শুনুন: বিধর্মী আক্রমণে ধ্বংসপ্রায়, দেশের বহু মন্দির পুনর্নির্মাণের ব্রত নিয়েছিলেন রানি অহল্যাবাই
কী হয়েছে ঠিক?
দেশ জুড়ে যত হিন্দু ধর্মস্থান রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম কর্ণাটকের দেবল-গনগপুর মন্দির। শ্রীদত্তাত্রেয়-র পূজার্চনার জন্য উৎসর্গ করা এই মন্দিরে শুধু কর্ণাটক থেকেই নয়, রাজ্যের বাইরে থেকেও অসংখ্য ভক্তের আনাগোনা চলে। আর সেই সুযোগটাই নিয়েছিলেন এই পাঁচ পুরোহিত- বল্লভ দিনকর ভাট, অঙ্কুর আনন্দরাও, প্রতীক সদাশিব, গঙ্গাধর শ্রীকান্ত ভাট এবং শরৎ ভাট। অভিযোগ, মন্দিরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের আদলে একাধিক নকল ওয়েবসাইট খুলে বসেছিলেন তাঁরা। যেসব ওয়েবসাইটের নামগুলি মূল ওয়েবসাইটের কাছাকাছি, যাতে অনলাইন সার্চ এঞ্জিনে কেউ মন্দিরের ওয়েবসাইটের খোঁজ করলে তার উত্তরে এই সাইটগুলিও দেখা যায়। মন্দিরের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এখানে অনুদান পাঠাতে পারতেন ভক্তরা। যেখানে মন্দিরে প্রার্থনা জানানোর জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষ হাজার টাকা ধার্য করেছিলেন, সেখানে এই পুরোহিতেরা অনুদানের সীমা বাড়িয়ে দেন ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মূলত দূরদূরান্তের ভক্তদেরই নিশানা করতেন তাঁরা, যাতে কেউ সন্দেহ না করে। আর এইসব নকল ওয়েবসাইটের দৌলতে সেই টাকা চলে আসত পুরোহিতদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে। মনে করা হচ্ছে, অন্তত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে চলছিল এই জালিয়াতি। এত বছর ধরে প্রায় ২০ কোটি টাকা এইভাবেই আত্মসাৎ করেছেন ওই পুরোহিতেরা। তবে শুধু অনলাইন পদ্ধতিতেই নয়, মন্দিরের প্রণামী বাক্স থেকেও তাঁরা নিয়মিত টাকা চুরি করতেন বলেই জানা গিয়েছে।
আরও শুনুন: রাম সেতুর অস্তিত্ব কি সত্যি আছে? তথ্য আর যুক্তি কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে?
মন্দির কমিটির এক আধিকারিকের অভিযোগের ভিত্তিতেই পাঁচ পুরোহিতের কথা জানতে পারে পুলিশ। যদিও অভিযোগ সামনে আসার পর থেকেই ওই চত্বর ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন তাঁরা। আপাতত পলাতক পুরোহিতদের খোঁজ চালাচ্ছে কর্ণাটকের কালাবুরাগি জেলার পুলিশ।