লোকসভায় জোড়া আসন জিতে সংসদে ফিরেছেন রাহুল গান্ধী। গ্রহণ করেছেন বিরোধী দলনেতার পদও। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কি উপভোগ করেন রাহুল? ক্ষমতাকে তিনি কীভাবে দেখেন, আগেই তার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা। শুনে নেওয়া যাক।
রাজনীতির সঙ্গে ক্ষমতার নিত্য যোগাযোগ। সেই বাড়তি ক্ষমতা যে কাউকে আমজনতার চেয়ে খানিক উপরে প্রতিষ্ঠা করে। ফলে সেই ক্ষমতাকে উপভোগও করেন অনেকেই। কিন্তু এই রাজনৈতিক ক্ষমতাকে রাহুল গান্ধী কীভাবে দেখেন? বিশেষ করে তিনি লোকসভার বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর সে প্রশ্ন ওঠাই সংগত। উপরন্তু রাহুল গান্ধী যে পরিবারে জন্মেছেন, তার অন্দরে রাজনৈতিক ক্ষমতার স্রোত নিত্যবহমান। তাঁর ঠাকুমার বাবা, ঠাকুমা, বাবা, প্রত্যেকেই প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছেন। মা সোনিয়া গান্ধীর সামনেও সে সুযোগ এসেছিল। পরিবারের সকলের মতো রাহুলও রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন, ক্ষমতার স্বাদও পেয়েছেন। এমনকি ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও তাঁর নাম বারেবারে চর্চায় উঠে এসেছে। ক্ষমতায় এলেও কি তিনি একইরকম থাকবেন, নাকি বদলে যাবেন? এ প্রশ্ন ঘুরছে অনেকের মনেই। তবে অনেক আগেই রাহুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ঠিক কীভাবে দেখেন তিনি। সে ব্যাখ্যা থেকেই হয়তো এ প্রশ্নের উত্তরও মিলে যায়।
আরও শুনুন:
চোখা বক্তৃতায় বাজিমাত রাহুলের, তবুও কোন কোন অংশ বাদ গেল সংসদের খাতায়?
রাহুল একদিকে দীর্ঘদিনের সাংসদ। অন্যদিকে দলীয় শিবিরেও তিনি কখনও যুব কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছেন, কখনও দলের সহ-সভাপতি, এমনকি সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। তবে ২০১৯ থেকেই দলের আনুষ্ঠানিক পদের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন রাহুল। ভারত জোড়ো যাত্রার মধ্যে দিয়ে হোক, বিজেপিবিরোধী দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরেই হোক, তাঁর রাজনৈতিক চর্চা অবশ্য জারি থেকেছে। কংগ্রেসের হয়ে লাগাতার বিজেপির রাজনীতির প্রতিরোধ গড়ার কাজও তিনি চালিয়ে গিয়েছেন। তবে সবটাই পদের ক্ষমতার বাইরে থেকেই। কিন্তু লোকসভায় ইন্ডিয়া জোটের ভালো ফলের পর সেই রাহুলকেই বিরোধী দলনেতা বলে মেনে নিয়েছেন সব দলের নেতানেত্রীরা। অর্থাৎ দীর্ঘ সময় পরে রাজনৈতিকভাবেই বড় ক্ষমতা হাতে এসেছে রাহুলের।
কিন্তু ক্ষমতাকে তিনি কীভাবে ব্যবহার করবেন, সে প্রশ্ন তো থেকেই যায়। ২০১৩ সালে এর একরকম উত্তর দিয়েছিলেন রাহুল। যখন কংগ্রেসের সহ-সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ৪২ বছরের নেতা। তিনি বলেছিলেন, এই নতুন দায়িত্বের জন্য যখন সবাই তাঁকে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিচ্ছেন, সেই সময়ই মা এসেছিলেন তাঁর ঘরে। একসঙ্গে বসে ছিলেন দুজনে। আর সেই সময়েই কেঁদে ফেলেন সোনিয়া। কেন-না তিনি বোঝেন, যে ক্ষমতার জন্য সবাই লালায়িত, সেই ক্ষমতা আসলে বিষের মতো। রাহুল মনে করেছিলেন তাঁর ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীর কথা। যাঁর সঙ্গে বন্ধুর মতোই ব্যাডমিন্টন খেলা তাঁর অভ্যাস ছিল, আর একদিন তাঁর মৃতদেহের সামনেই দাঁড়াতে হয়েছিল কিশোর রাহুলকে। আবার যে বাবা রাহুলের কাছে নায়ক ছিলেন, একদিন তাঁরও ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছেছিল। ক্ষমতাই কেড়ে নিয়েছিল তাঁর প্রিয় দুই মানুষকে। সেই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন বলেই রাহুল বিশ্বাস করেন, ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরতে নেই। সেদিন তিনি বলেছিলেন, বাকি সকলের চেয়ে উপরে ওঠার জন্য ক্ষমতাকে তাড়া করতে নেই। বরং ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে হয়, ওই নিচে থাকা মানুষদের দুর্বলতায় শুশ্রূষা দিতে। তাদের না-বলা কথা তুলে আনা, না-পারা কাজ করাই আসলে ক্ষমতার কাজ, বলেছিলেন রাহুল গান্ধী।
আরও শুনুন:
হেঁটে দেখতে শিখুন! ‘যাত্রা’ যখন রাজনীতির অন্য নাম
সংসদে বিরোধী দলনেতা হিসেবে প্রথম ভাষণে রাহুল যেভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার আর ক্ষমতার হাতে দুর্বলের পিষে যাওয়ার কথা বলেছেন, তাতে সেই পুরনো কথা মনে আসতেই পারে। যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে ঔদ্ধত্য আর ঘৃণাভাষণ সমার্থক হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে বিরোধী দলনেতা হিসেবে সংযতভাবে, যুক্তি দিয়েই শাসকদলকে বিঁধেছেন রাহুল, সৌজন্যের সীমাটুকুও ছাড়াননি। ক্ষমতার যে বিষাক্ত দিকের কথা তিনি জেনেছিলেন, ক্ষমতা হাতে পেলেও সে কথা তিনি মনে রাখবেন, তাঁর উপরে আপাতত এই আশাই রাখছে এ দেশ।