মন্দির-মসজিদ বিতর্কে জুড়ল আজমেঢ় শরিফ! দরগা তৈরি হয়েছে মন্দির ভেঙে, দাবি হিন্দু সেনার। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে বিভিন্ন মহলে। ঘটনার জল গড়িয়েছে আদালত অবধি। অথচ রাজস্থানের এই দরগায় নিয়মিত চাদর চড়াতেন প্রধানমন্ত্রী মোদি! তালিকায় আরও অনেক রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভোটের আগে মন্দিরে ভিড় জমান নেতারা। মসজিদ, গীর্জা, গুরুদ্বারেও যান অনেকেই। প্রধানমন্ত্রী মোদিও ব্যতিক্রম নন! লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে এর বহু আগে থেকেই নিয়মিত রাজস্থানের আজমেঢ় দরগার চাদর চড়াতেন নরেন্দ্র মোদি।
মন্দির-মসজিদ বিতর্ক এ দেশে নতুন কিছু নয়। হিন্দুপীঠ ভেঙে তৈরি হয়েছে ইসলাম ধর্মস্থান, এই দাবি হামেশাই করে থাকেন হিন্দুত্ববাদিরা। তালিকায় থাকে, জ্ঞানবাপি, ইদগাহ, সম্ভল সহ একাধিক মসজিদের নাম। সেই তালিকায় এবার জুড়েছে রাজস্থানের বিখ্যাত দরগা, আজমেঢ় শরিফ। হিন্দু সেনা এবং মহারানা প্রতাপ সেনা নামের দুই হিন্দু সংগঠনের দাবি, আজমেঢ় শরিফ দরগাটি আসলে হিন্দু শিব মন্দির ভেঙে তৈরি করা। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির ওই দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্র এবং ASI-কে নোটিস পাঠিয়েছে আজমেঢ়ের এক স্থানীয় আদালত। বিষয়টা যে গুরুতর সে নিয়ে সন্দেহ নেই। কারণ, কিছুদিন আগেই সম্ভল মসজিদে সার্ভে করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েছিলেন সরকারি আধিকারিকরা। পুলিশের সঙ্গে বচসায় প্রাণও হারান অনেকে। তাই আজমেঢ় শরিফ সম্পর্কে হিন্দু সেনার দাবিতে আশঙ্কিত অনেকেই। এই আবহে, সামনে আসছে দরগা সম্পর্কে একের পর এক তথ্য। গোটা দেশেই জনপ্রিয় রাজস্থানের এই দরগা, তবে রাজনৈতিক মহলে এর অন্য খাতির। খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদি এখানে নিয়মিত চাদর চড়াতেন। ২০১৬ সালে এক অনুষ্ঠানে দরগা সম্পর্কে প্রশংসা করতেও শোনা যায় তাঁকে। শুধু তাই নয়, বিদেশের রাষ্ট্রনেতারাও এখানে বহুবার এসেছেন। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু বারাক ওবামা অবধি এখানে এসেছেন, নিষ্ঠাভরে চাদর চড়িয়েছেন। ভারতে এলেই এখানে হাজির হতেন শেখ হাসিনা, বিতর্কের আবহে সেই তথ্যও সামনে আসছে।
আসলে, এই দরগা স্রেফ ধর্মস্থান হিসেবে নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বড় একটা ভূমিকা পালন করে। আর সেটা সব দলের নেতারাই ভালমতো জানেন। বিজেপির মুসলিম নেতাদের এখানে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে, একইসঙ্গে কংগ্রেস কিংবা অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারাও হাজির থাকেন দরগার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। আবার এখানেই ঘটা করে পালন হয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। চলতি বছরেই মোদির জন্মদিন উপলক্ষে ৪০০ কেজি প্রসাদ বিতরণ করেছে আজমেঢ় শরিফ। খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির এই দরগা আকবরের আমল থেকেই বিখ্যাত। প্রতিবছর দেশ-দেশান্তর থেকে বহু ইসলাম ধর্মে মানুষ এখানে আসেন। অন্য ধর্মের মানুষও যান আজমেঢ় শরিফে। একইসঙ্গে দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক নেতাদের যাতায়াত এই দরগার গুরুত্ব বাড়ায়। সুতরাং এর সঙ্গে হিন্দু মন্দিরের প্রসঙ্গ ধরে যে নতুন দাবি তোলা হচ্ছে, তাতে সমস্যা হতে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।