সংবিধান পালটে দিতে চায় বিজেপি। এই অভিযোগ তুলে এবারের ভোটকে সংবিধান রক্ষা করার লড়াই বলেছিলেন রাহুল। তার পালটা সংবিধান বদলানোর অভিযোগে কংগ্রেসকেই নিশানা করলেন মোদি। তোপ দাগলেন ইন্দিরা আমলের ৩ সংশোধনীকে। শুনে নেওয়া যাক।
সাম্প্রতিক রাজনীতিতে শাসক-বিরোধী চাপানউতোরের একটি মূল অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে সংবিধান। ভোটপ্রচারের সময় থেকে শুরু করে, ভোট শেষে সংসদে দাঁড়িয়েও সংবিধান তুলে বিজেপি শিবিরকে নিশানা করেছেন রাহুল। অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সরকারের একাধিক কাজ আসলে দেশের সংবিধানের বিরোধী। পাশাপাশি মোদি জমানার একাধিক বিল নিয়েও বিরোধীদের অভিযোগ, এইসব বিল কার্যকর করার মাধ্যমে আসলে সংবিধানই বদলে দিতে চায় বিজেপি। লোকসভার অধিবেশনেও বিরোধীদের বক্তব্যে বারেবারে সেই অভিযোগ উঠে এসেছে। রাহুল বলেছিলেন, সংবিধান রক্ষা করতেই মানুষ বিরোধীদের বেশি আসনে জিতিয়ে পাঠিয়েছে। পালটা প্রধানমন্ত্রী মোদির দাবি, আসলে সংবিধান রক্ষার দাবি তাঁকে তথা বিজেপিকেই দিয়েছেন দেশবাসী। বিজেপি নয়, বরং কংগ্রেসের হাতেই সংবিধানের বদল ঘটেছে বলে পালটা তোপ মোদির। আর তার যুক্তি হিসেবেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংবিধানে যে তিন সংশোধনী এনেছিলেন, সেদিকে নিশানা করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
কোন কোন সংশোধনীর দিকে নিশানা নরেন্দ্র মোদির?
আরও শুনুন:
বিচারপতিকে ‘ভগবান’ মনে করলেই সর্বনাশ! হুঁশিয়ারি খোদ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের
জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে তিনটি সংশোধনী আনা হয়েছিল সংবিধানে। ৩৮, ৩৯ এবং ৪২ নম্বর সংশোধনী। সেই প্রসঙ্গ টেনেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেন মোদি। কংগ্রেস জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানকেই আক্রমণ করেছে, অভিযোগ তাঁর।
জরুরি অবস্থা জারির আগে রায়বরেলিতে ইন্দিরা গান্ধীর জয় বাতিল করে দিয়েছিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট। বিরোধী প্রার্থী রাজনারায়ণের দায়ের করা মামলায় হাই কোর্ট এই অভিযোগ মেনে নেয় যে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনী প্রচারে প্রশাসনকে দিয়ে নানাভাবে প্রভাব খাটিয়েছেন। সেই রায়ে সাংসদ পদও হারান তিনি। এরপরে জরুরি অবস্থা জারি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই সময়েই সংবিধানেও সংশোধনী আনা হয়। ১৯৭৫ সালের ২২ জুলাই কার্যকর হওয়া ৩৮ নম্বর সংশোধনীতে বিচার বিভাগের একাধিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ৩৯ নম্বর সংশোধনী পেশ করে বলা হয় প্রধানমন্ত্রী এবং লোকসভার স্পিকারের নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও মামলা আদালত গ্রহণ করতে পারবে না। ৪২ নম্বর সংশোধনীতে লোকসভা ও বিধানসভায় মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ছয় করা হয়েছিল। এছাড়া বলা হয়, সংসদের কোনও সিদ্ধান্ত, বিল, আইন ইত্যাদির বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। একইসঙ্গে সাংসদ-বিধায়কের সদস্যপদ সংক্রান্ত বিবাদের বিচারের অধিকার আদালতের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। যদিও ১৯৭৭ সালের মার্চে জনতা পার্টির সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইন্দিরা সময়ে হওয়া তিনটি সংশোধনীই বাতিল করে দেওয়া হয়। সেই প্রসঙ্গ টেনেই এবার সংবিধান ইস্যুতে কংগ্রেসকে বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।