প্রধানমন্ত্রী তো গোটা দেশেরই। অথচ ভোটের সময় এলেই দেখা যায় তিনি তাঁর দেশেরই কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলছেন, বক্তৃতা দিচ্ছে। নির্বাচনের এই সংস্কৃতি কি কাম্য? প্রশ্ন তুলে দিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। কী তাঁর অভিমত? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
১৯৭৭-এর পর এটাই নাকি দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য অনেকটা এরকমই। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার অনেক কারণই আছে। তবে, রাজনৈতিক মহল এবং বিরোধী দলগুলির অনেকেরই বক্তব্য যে, এই নির্বাচনের পর থেকে দেশের সাধারণ নির্বাচনের খোলনলচেই বদলে যাবে। যদি আর একবার মোদি সরকার ক্ষমতায় আসে, তাহলে হয়তো ভোট-ই আর হবে না, এমন আশঙ্কাও ঘোরাফেরা করে রাজনীতির হাওয়ায়। তবে আদৌ তা সত্যি হবে কি-না, এই মুহূর্তে তা বলা সম্ভব নয়। যা বলা যায় তা হল, দেশের নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে সত্যিই ভাবনাচিন্তা করছে শাসকদল। আর সে ইঙ্গিত মিলছে খোদ নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যেই।
আরও শুনুন: ২৭২-এর আগে যদি থামে গেরুয়া-রথ, প্ল্যান-বি কী? শাহ বললেন…
সম্প্রতি সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে নিজের মত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, দেশের উন্নয়ন আর নির্বাচনকে মিলিয়ে মিশিয়ে দেখার রেওয়াজ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। শুধুমাত্র ভোটের কারণে পাঁচ বছর ধরে রাজনীতি করা সমীচীন নয়। নির্বাচন থাকুক, মাস তিন চারেকের জন্য। তারপর উন্নয়ন এবং তার জন্য কাজ করে যাওয়াই হোক মূল লক্ষ্য। স্বভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে যে, ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’-এর ভাবনাই কি ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী? বক্তব্যে সেই আভাস খানিকটা তিনি দিয়েওছেন। তাঁর মতে, ১৯৫১-১৯৫২ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয়, শীতকালে। তার পর সেই কাঠামোয় বদল আসে ১৯৬৭ সাল থেকে। সেই প্রথম নির্বাচনের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন মোদি। আরও খোলসা করে তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে একটি কমিশন তৈরি হয়েছিল। কমিশনের রিপোর্টও চলে এসেছে। তা এখন পড়ে দেখে, তা থেকে কোন কোন কার্যকরী সূত্র বেরোতে পারে, তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। অর্থাৎ দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যে বদল আসতে পারে, সেই সম্ভাবনা জাগিয়েই রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও শুনুন: শুধু রঙ্গিলার নয়, মোদির কেন্দ্রে বাতিল আরও ৩৩ জনের মনোনয়ন
তবে শুধু পদ্ধতিগত বদল নয়। নির্বাচনী সংস্কৃতিও খানিকটা বদলাতে চান তিনি। সে আভাসও আছে তাঁর বক্তব্যে। প্রথমত, নির্বাচনকে পাখির চোখ করে উন্নয়নের পক্ষপাতী তিনি নন। তিনি জানিয়েছেন, চার পাঁচ মাসে ভোট মিটে যাক। বাকি সাড়ে চার বছর অন্তত সকলে মিলেমিশে দেশের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। দেশের বর্তমান নির্বাচনী সংস্কৃতি যে তাঁকে খানিকটা আশ্চর্যই করে, সে কথাও জানিয়েছেন মোদি। জানিয়েছেন সমস্যার কথাও। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই তিনি দেখেছিলেন যে, নির্বাচনের সময় সরকারি অফিসারদের ভোটের কাজ করতে হয়। প্রায় ১০০ দিন তাঁরা এই কাজেই ব্যস্ত থাকেন। যার প্রভাব তো খানিকটা প্রশাসনিক কাজেও পড়ে। উপরন্তু, রাজ্যে নির্বাচনের সময় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কোনও একটি রাজ্যে গিয়ে সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই বক্তৃতা দিতে হয়। মোদির প্রশ্ন, এভাবে দেশ চলবে কী করে? তিনি নিজেও ভোটের সময় বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে জনসভা করেন, বক্তৃতা দেন। এই সংস্কৃতিকে ‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা’ হিসাবেই তুলে ধরেছেন তিনি। এবং প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে যে, সেই সংস্কৃতিতে বদল আনতে তিনি প্রয়াসী।
তাহলে কি সত্যিই বদলে যাবে দেশের ভোটের বাদ্যি। আপাতত আভাসটুকু মিলল, বাকিটা তোলা থাকল ভবিষ্যতের হাতেই।