ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে নানা অন্যায়, অসাম্যের বিরুদ্ধে কেন সুবিচার পাবেন না মুসলিম নারীরা? এই প্রশ্নেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে জোর সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। ঠিক কী বলেছেন তিনি? শুনে নেওয়া যাক।
২০২৪ নির্বাচনের আগেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সরগরম গোটা দেশ। রাজনৈতিক মহলের ধারনা, পরবর্তী নির্বাচনে এই ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এবং সাম্প্রতিক গতিবিধি অন্তত সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঠিক তিন তালাক রদ বিতর্কের মতোই এই মুহূর্তে চর্চায় উঠে এসেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করার বিষয়টি। সম্প্রতি এই প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কথা জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে যে অসাম্য ও অন্যায়ের মুখোমুখি হতে হয় মুসলিম নারীদের, তা দূর হওয়া জরুরি। নিজের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে একটি পরিবারের উদাহরণ টেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, এক পরিবারের অনেক সদস্যদের জন্য কি আলাদা আলাদা নিয়ম চালু থাকতে পারে? অর্থাৎ, এক দেশে ভিন্ন ভিন্ন আইন বলবৎ থাকা কি বাঞ্ছনীয়, এ প্রশ্নই প্রকারন্তরে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংবিধান টেনেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের সকল মানুষের সমান অধিকার তো সাংবিধানিক নিশ্চয়তার মধ্যেই পড়ে। তাহলে এক্ষেত্রে ভিন্ন মত উঠছে কেন? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর।
আরও শুনুন: আবাসনে রাখা যাবে না কোরবানির ছাগল, হনুমান চালিশা পড়ে বাড়ি শুদ্ধ করলেন বাসিন্দারা
বিরোধীমহলের একাংশ বরাবরই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছে। তাঁদের মতে, বিজেপি যে একমাত্রিক দেশ চাইছে, তা মূলত তিনটি অ্যাজেন্ডার উপর ভিত্তি করে। অয্যোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করা ও দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা। প্রথম দুটি ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে গেরুয়া শিবির। তাই পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে তাদের পাখির চোখ হয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। বিরোধীদের মূল অভিযোগ, এই বিধি দেশের সব ধর্মের মানুষের ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, যার মধ্যে থাকবে বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, উত্তরাধিকারের মতো বিষয়। এর ফলে ক্ষুণ্ণ হবে সম্প্রদায়গত বৈচিত্র। এই সব ক্ষেত্রে মুসলিম জনসমাজে শরিয়তি বিধি চালু রয়েছে। প্রত্যাশির ভাবেই, মুসলিম সমাজ থেকেই এর বিরোধিতা আসবে বলে মনে করেছেন বিশ্লেষকরা। আবার কোনও কোনও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, মুসলিমদের তরফ থেকে এই বিরোধিতা যত বাড়বে, তত অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে মতামত জোরালো হবে। এর ফলে নির্বাচনের আগে মেরুকরণের রাজনীতি আরও স্পষ্ট হবে, আর তার সুফল গেরুয়া শিবিরের দিকে যাবে বলেই মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে, বিজেপির মত, এই বিধি চালু হলে লিঙ্গসাম্য বরং জোরালো হবে। মুসলিম নারীদের প্রতি অন্যায়-অবিচারের মাত্রা কমবে। নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হবে এই বিধি। এই দুই মত অবলম্বন করেই এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক মহলে জোর বিতর্ক। এর মধ্যেই এসেছে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, আর তার জবাবেই ফুঁসে উঠেছেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসির মতো নেতা।
আরও শুনুন: দলিত বলে জগন্নাথের সামনে যেতে পারেননি রাষ্ট্রপতি! দাবি নেটদুনিয়ার, সত্যিটা কী?
ওয়েইসির মত, দেশের বৈচিত্র আর বহুত্বই প্রধানমন্ত্রীর কাছে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নামে দেশের বৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে বলেই মত তাঁর। তোপ দেগে তিনি বলেছেন অভিন্ন হিন্দু বিধিই চালু করার পক্ষে সওয়াল করছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই তাঁর পালটা প্রস্তাব, শিখদের কাছে গিয়েও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা বলা হোক, দেখা যাক তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়। এই বিধি চালু হলে দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষই তার আওতাভুক্ত হবেন। তাহলে আলাদা করে শিখদের কথা কেন তুললেন ওয়েইসি? রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ধর্ম নিয়ে শিখ সম্প্রদায়ের আবেগকেই এই ইস্যুতে পালটা হিসাবে কাজে লাগাতে চাইছেন ওয়েইসি। যদিও শিখ সম্প্রদায়ের তরফ থেকে এখনও ওয়েইসির মতের সমর্থনে কোনও বক্তব্য আসেনি। তবে এই ইস্যুতে চাপানউতোর যেভাবে বাড়ছে, তাতে লোকসভা নির্বাচনে যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে, তা বলাই যায়।
#WATCH | AIMIM chief Asaduddin Owaisi speaks on PM Modi’s statement on Uniform Civil Code in Bhopal; says, “India’s PM considers India’s diversity & its pluralism a problem. So, he says such things…Will you strip the country of its pluralism & diversity in the name of a UCC?…… pic.twitter.com/XeBhdBDycD
— ANI (@ANI) June 27, 2023