জাত-পাতের বৈষম্য দূর করতে প্রাণপাত করেছিলেন পেরিয়ার। ভারতবর্ষের ইতিহাস তাঁকে স্মরণ করে শ্রদ্ধায়, সম্ভ্রমে। সেই কিংবদন্তির নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেই প্রশ্ন এল জাতিগত বৈষম্য নিয়ে। যা নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই সরব হলেন বহু মানুষ। এই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী জানাল? আসুন শুনে নিই।
মাত্র ১ নম্বরের একটি প্রশ্ন। তাই-ই উসকে দিল বড় বিতর্ক। তামিলনাড়ুর পেরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে ফিরে এল জাতিগত বৈষম্যের ভূত। এ যেন অনেকটা ইতিহাসের আয়রনি; ভারতবর্ষের বুকে দীর্ঘকাল শিকড় চারিয়ে থাকা জাতিগত ভেদাভেদ দূর করতে যাঁরা লড়াই করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কিংবদন্তি পেরিয়ার। আম্মেদকরের মতোই তাঁর অবদানও ইতিহাসে স্মরণীয়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের জনজীবনের প্রেক্ষিতে, মানুষের মনে সাম্যের মশাল জ্বালিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন পেরিয়ার। অথচ যে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে শ্রদ্ধা জানায়, সেখানকার ইতিহাস পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি হল সেই জাতিগত পার্থক্যকে নিয়েই। স্বাভাবিক ভাবেই এহেন প্রশ্নপত্র প্রকাশ্যে আসায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
আরও শুনুন: ধর্মীয় ভাবাবেগে লাগতে পারে আঘাত, সাইনবোর্ড থেকে ‘গোমাংস’ শব্দ মোছার নির্দেশ রেস্তরাঁগুলিকে
পেরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের স্নাতকোত্তর স্তরে অর্থাৎ এমএ ক্লাসের সেকেন্ড সেমিস্টারের প্রশ্নপত্র নিয়েই এই বিতর্ক। মোট ৭৫ নম্বরের এই প্রশ্নপত্রে, একটি পর্বে ১৫ নম্বরের মাল্টিপল চয়েস ধরনের প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ধার্য ১ নম্বর। সেখানে নানা ধরনের প্রশ্নের মধ্যেই একটি প্রশ্ন ছিল নীচু জাত নিয়ে। জানতে চাওয়া হয়েছিল, তামিল নাড়ুতে সবথেকে নীচু জাত হিসাবে কোনটিকে গণ্য করা হয়? উত্তরের জন্য চারটি অপশন দেওয়া ছিল। এই প্রশ্নপত্রের ছবি যখন নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তখন তাজ্জব হয়ে যান অসংখ্য মানুষ। এর বিরোধিতায় একের পর এক মন্তব্য উঠে আসে। স্বয়ং পেরিয়ারের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়েই একটি প্রশ্ন কিনা জাতিগত বৈষম্য নিয়ে! নেটিজেনদের সবথেকে আশ্চর্য করেছে এই বিষয়টি।
আরও শুনুন: শপিং মলের ভিতরে নমাজ পড়ার জেরে দায়ের মামলা, পালটা দাবি হনুমান চালিশা পাঠেরও
বিতর্ক ছড়াতেই অবশ্য পদক্ষেপ করেছে বিশ্ববিদ্যাল কর্তৃপক্ষ। কেন এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেন তাঁরা। কথা বলেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে। তাঁদের মত, প্রশ্নটি একেবারে অযৌক্তিক নয়, বরং সিলেবাস মান্য করেই তা রাখা হয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মত, এই প্রশ্নটি না-রাখলেই ভাল হতো। পাশাপাশি তিনি এ-ও উল্লেখ করেছেন যে, প্রশ্নপত্রটি অন্য কলেজের শিক্ষকরা তৈরি করেছিলেন। তবে বিতর্কের জেরে ঘটনার জল গড়িয়েছে বহুদূর। সে-রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরও। অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট মোতাবেকই এ ব্যাপারে কে দোষী তা নির্ধারিত হবে, এবং সেইমতো পরবর্তী পদক্ষেপ করবে বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে এমন একটা বিষয়ে যথারীতি লেগেছে রাজনীতির রং। মুখ খুলেছেন সে-রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কে পালানিস্বামী। তাঁর দাবি, প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পড়ুয়াদের মনে জাতিগত অসাম্যের ধারণাটিকেই ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর ধুলোয় মিশছে পেরিয়ারের আদর্শ। শাসকদল ডিএমকে-র রাজনীতিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। এই ইস্যুতে সরকারকে একহাত নিয়েছেন সে-রাজ্যের বিজেপি নেতা কে আন্নামালাই। চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়ে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এই প্রশ্নপত্র ডিএমকে-র অন্তঃসারশূন্য রাজনৈতিক আদর্শকেই সকলের সামনে তুলে ধরল।