দিল্লি পৌঁছলেই মিলবে কেদারনাথের দর্শন। রাজধানীতে তৈরি হতে চলেছে এমনই এক শিব মন্দির। জানা গিয়েছে, মন্দিরটি দেখতে হুবহু উত্তরাখণ্ডের কেদার মন্দিরের মতো। কিন্তু এই ধরনের মন্দির প্রতিষ্ঠায় চটে লাল দেশের ধর্মগুরুরা। ঠিক কোন যুক্তিতে মন্দির প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করছেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দিল্লিতে তৈরি হচ্ছে নতুন কেদারনাথ মন্দির। ইতিমধ্যেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী সহ আরও অনেক বিজেপি নেতা। তবে এই ধরনের মন্দির প্রতিষ্ঠা মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না ধর্মগুরুরা। শঙ্করাচার্য থেকে রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত, নতুন কেদার মন্দির প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন সকলেই।
:আরও শুনুন:
অতি দর্পে হতা লঙ্কা! উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ধাক্কা খেতেই মনে করালেন যোগী
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম কেদারনাথ ধাম। পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই মন্দির বছরের বেশিরভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে। মাত্র কয়েক মাস মন্দির খোলা হয়। তাতেও রীতিমতো দুর্গম পথ আর প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে পৌঁছতে হয় বাবা কেদারের দরবারে। তাই ভক্তদের কথা ভেবে রাজধানীতেই তৈরি হচ্ছে কেদার মন্দিরের অনুরূপ একটি শিব মন্দির। আর সেই নিয়েই যত গোল। সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ তথা দেশের নামকরা সব ধর্মগুরুরা ইতিমধ্যেই এই মদনির প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এ বিষয়ে শঙ্করাচার্যের দাবি, জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থান এইভাবে বদলানো যায় না। তা হিন্দু ধর্মের অপমান। একইসঙ্গে দিল্লিতে কেদার মন্দিরের প্রতিষ্ঠায় আপত্তি জানিয়েছেন রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তাঁর দাবি, কেদারনাথের নামে আর কোনও মন্দির থাকতে পারে না। তাই নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা হলেও তার নাম আলাদা রাখার দাবি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠায় গর্জে উঠেছেন কেদারনাথ মন্দিরের পুরোহিত এবং সাধুরা। তাঁদের দাবিও প্রায় এক। নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠায় কারও আপত্তি নেই, কিন্তু কেদার নাম নিয়ে যত সমস্যা। আসলে প্রতি বছর লাখো ভক্তের ভিড় জমে উত্তরাখণ্ডের এই মন্দিরে। বছর খানেক আগে ভয়ঙ্কর বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছিল উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ব্যাপক ক্ষতি হয় মন্দির সংলগ্ন এলাকার। তবু কেদার মন্দির অক্ষতই থাকে। এই ঘটনার পর থেকে মন্দিরের দৈব মাহাত্ম আরও ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে অবশ্য কেদার মন্দিরের জনপ্রিয়তার জন্য সোশাল মিডিয়াই বড়সর ভূমিকা পালন করছে। ভক্তরা কেদার মন্দির যাওয়ার ভ্লগ তৈরিতে বেশ আগ্রহী। তা দেখার জন্যও মুখিয়ে থাকে নেটদুনিয়ার বাসিন্দারা। কিন্তু এই কেদার মন্দির যদি দিল্লিতেই তৈরি হয়, তাহলে অনেকে উত্তরাখন্ডের মন্দিরে যাওয়ার আগ্রহ হারাবেন বলে দাবি কেদার মন্দিরের পুরোহিতদের।
:আরও শুনুন:
মোদি কোনও ভুল করলে নিশ্চয়ই ধরিয়ে দেব, শুভাকাঙ্ক্ষী হয়েই বার্তা খোদ শঙ্করাচার্যের
ঘটনার জল আরও ঘোলা হয়েছে রাজনীতি যোগে। আসলে, দিল্লির মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে উপস্থিত ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। এতেই নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠাকে বিজেপি সরকারের উদ্যোগ বলে দাগিয়েছে কংগ্রেস। হাত শিবিরের প্রশ্ন, নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা হলে তার নাম কেন কেদারনাথ হবে? একসঙ্গে গোটা ঘটনায় বিজেপি শিবিরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি হাত শিবিরের নেতারা। যদিও উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, নতুন একটি মন্দির তৈরি হতে চলেছে মাত্র, কেদারনাথ ধামের ঐতিহ্য অটুট থাকবে। একই দাবি দিল্লির মন্দির নির্মাতা ট্রাস্টেরও। নতুন মন্দিরটি তৈরি হচ্ছে স্রেফ ভক্তদের কথা ভেবে। উত্তরাখন্ডের মন্দির মাত্র কয়েক মাস খোলা থাকে। তাতে ইচ্ছা সত্ত্বেও কেদার দর্শন করতে পারেন না অনেকেই। দিল্লির মন্দির সারাবছর খোলা থাকবে, যাতে এই সমস্যা অনেকটাই মিটবে। এর সঙ্গে উত্তরাখণ্ড সরকারের কোনও যোগ নেই বলেও জানিয়েছে দিল্লির ট্রাস্ট। মুখ্যমন্ত্রী ধামি তাঁদের অনুরোধেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এমন মন্দির দেশের অন্যান্য জায়গাতেও রয়েছে। তাই গোটা ঘটনায় রাজনীতির যোগ টানতে নারাজ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যেভাবে এই মন্দির প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করা হচ্ছে তাতে বিভ্রান্ত ট্রাস্টের সদস্যরাই। তাই ঠিক কবে মন্দির প্রতিষ্ঠা হবে, বা আদৌ এই নামে দিল্লিতে মন্দির প্রতিষ্ঠা হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।