ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে দুর্দিন। অতিমারি বিধ্বস্ত সমাজে ‘বিষফোড়া’ হয়ে জন্ম নিয়েছে ‘গণ ছাঁটাই’। সমীক্ষা অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরে সারা বিশ্বে চাকরি হারিয়েছেন লক্ষাধিক প্রযুক্তি কর্মী। যার মধ্যে রয়েছেন অসংখ্য ভারতীয়ও। মূলত কোন কোন সংস্থা রয়েছে এর নেপথ্যে? আসুন শুনে নিই।
আর্থিক মন্দায় ধুঁকছে গোটা বিশ্ব। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের উপর। একদিকে জিনিসপত্রের উত্তরোত্তর মূল্যবৃদ্ধি অন্যদিকে দেদার কর্মী ছাঁটাই। সব মিলিয়ে রোজকার খরচ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে চাকুরীজীবী মধ্যবিত্তরা। সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে এমনই এক সমীক্ষা। যেখানে নতুন বছরের প্রথম দু-মাসেই ঠিক কতজন মানুষ কাজ হারালেন, তা সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও শুনুন: পৃষ্ঠপোষক আদানি গোষ্ঠী, জানা মাত্রই সাহিত্য সম্মান প্রত্যাখান মহিলা দলিত কবির
শুনতে অবাক লাগলেও, এর নেপথ্যে রয়েছে বিশ্বের নামীদামী সংস্থাগুলোই। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই সারা বিশ্বে চাকরি হারিয়েছেন ১৭,৪০০ এরও বেশি প্রযুক্তি-কর্মী। যাঁরা কর্মরত ছিলেন নামী সংস্থাতেই। অন্যদিকে এ বছর জানুয়ারি মাসে কাজ হারিয়েছেন ১ লাখেরও বেশি মানুষ। সংবাদমাধমের দাবি, এঁদের মধ্যে অনেকেই যুক্ত ছিলেন মাইক্রোসফট, আমাজন এমনকি গুগল-এর মতো বিখ্যাত কোম্পানির সঙ্গেও। সব মিলিয়ে বলা যায়, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত কাজ হারিয়েছেন প্রায় ১.১ লক্ষ মানুষ। যার নেপথ্যে রয়েছে সারা বিশ্বের নামকরা ৩৪০টিরও বেশি কোম্পানির কর্মীছাঁটাই। এখানেই চমকের শেষ নয়। সমীক্ষা জানাচ্ছে, গত মাসে প্রায় প্রতিদিনই চাকরি হারিয়েছেন ৩৩০০ জন প্রযুক্তি কর্মী। এবং নিয়ম করে ছাঁটাই প্রক্রিয়া চালিয়েছে প্রায় ২৮৮টি সংস্থা। বলা বাহুল্য, এভাবে চলতে থাকলে বছরের শেষে গিয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যাটা ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা হিসেব করলে আঁতকে উঠছেন প্রায় প্রত্যেকেই।
আরও শুনুন: খাঁচার ভিতর নতুন বর! মধ্যপ্রদেশে এলাহি আয়োজনে বিয়ে হল টিয়া-ময়নার
তবে এই ছাঁটাইয়ের ধারা নতুন নয়। সমীক্ষা বলে, গতবছরও একইভাবে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হেঁটেছিল বহু সংস্থা। বছরের শেষে গিয়ে সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১,৫৪,৩৩৬ অর্থাৎ দেড় লক্ষের বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছিলেন। জানা গিয়েছিল, ১০০০-এরও বেশি সংস্থা গণহারে কর্মী ছাঁটায়ের পথে হেটেছিল ২০২২ সালে। এবছর মাত্র দুমাসেই যে হারে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে, তাতে বিগত বছরগুলির সব রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ওয়াকিবহাল মহলের। তবে এই গণহারে কর্মী ছাঁটাই যে একেবারেই সংস্থার মর্জিমাফিক হচ্ছে এমনটা নয়। গোটা বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোও এমনই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে এ ছাড়া অন্য কোনও উপায় খোলা নেই নামী সংস্থাগুলির কাছেও, দাবি এমনটাই। অন্যদিকে এই চাকরিহারা মানুষগুলোর শেষ পর্যন্ত কী পরিণতি হবে, তা নিয়েও যথেষ্ট শঙ্কিত বিভিন্ন মহল। বছরের শুরুর এই পরিসংখ্যান যদি সিঁদুরে মেঘ হয়, তবে রিসেশনের ধাক্কা যে বছরটাকে বিপর্যস্ত করবে, বলা যায় সে পূর্বাভাস ইতিমধ্যেই স্পষ্ট।