ভারতীয় সেনার বিভিন্ন অপারেশনের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়। বিভিন্ন সিনেমার দৌলতে আমরা অনেকেই এর সঙ্গে পরিচিত। আফগানিস্তান তালিবানের দখলে যাওয়ার পর সেখানে থাকা ভারতীয়দের দফায় দফায় ফিরিয়ে আনছে সেনা। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন দেবী শক্তি’।
ভারতবর্ষ মাতৃপূজার দেশ। এখানে দেবী দুর্গাকে পূজা করা হয় সাড়ম্বরে। নারীশক্তির যে অভূতপূর্ব ক্ষমতায়ন এই দেবীপূজার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তাকেই শ্রদ্ধায় প্রণাম জানায় ভারতবাসী। সসম্মানে আরাধনা করা হয় দেবীশক্তির।
আরও শুনুন: ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে তালিবান, ভয়ে ঘরছাড়া আফগানিস্তানের Little Messi
সেই শক্তির আরাধনার প্রকাশ ভারতীয় সেনাতেও। আমরা জানি, অতীতে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মাতৃপূজা করতেন। দেশের মুক্তির জন্য, দেশের মানুষের পরাধীনতা মোচনের জন্য দেশমাতৃকার পূজা আর দেবীপূজা মিলেমিশে যেন এক হয়ে গিয়েছিল। বীর বিপ্লবীদের কাজে বারংবারই তার প্রমাণ মিলেছে। যার সাক্ষী আছে আমাদের ইতিহাস।
সেই ট্র্যাডিশন যেন সমানে চলছে।
আরও শুনুন: মা দুর্গা এবার আসছেন কীসে? গমনই বা কোন যানে? জেনে রাখুন তার ফলাফল
সম্প্রতি কাবুল থেকে বিপর্যস্ত ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার যে অপারেশন চলছে, সেটির মধ্যেও এই দেবী আরাধনার প্রকাশ। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন দেবী শক্তি’।
তালিবানের দখলে আফগানিস্তান চলে যাওয়ার পর থেকে সন্ত্রস্ত ভারতীয়দের কাবুল থেকে উদ্ধার করে আনার কাজ চালাচ্ছে ভারত সরকার। ভারতীয় বায়ুসেনা, এয়ার ইন্ডিয়া ও বিদেশমন্ত্রকের সদস্যদের মিলিত চেষ্টার ফলেই তা সম্ভব হচ্ছে। তবে এতদিন এই অপারেশনের কোনও নাম ছিল না। বা থাকলেও তা জানত না সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের টুইটে এর নাম জানা যায়।
আরও শুনুন: প্রতিবাদীদের গুলি থেকে মহিলা অপহরণ – ক্ষমতা দখলের পরই তুমুল কুকীর্তি তালিবানের
গত ১৫ আগস্ট তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরই এই অপারেশন শুরু হয়। এই জটিল অপারেশনের দায়িত্বভার তুলে নেয় সরকার। একে তো তালিবানি কবজা থেকে নাগরিকদের উদ্ধার করে আনা। দ্বিতীয়ত, একাধিক দেশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করেই এই কাজ চালাতে হচ্ছে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের নীতি এবং বায়ুসেনাদের সাহসের জোরে প্রথম দফাতেই ৪০ জনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। শুরু হয় ‘অপারেশন দেবী শক্তি’। ১৭ আগস্ট জরুরি এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন সমস্ত ভারতীয় নাগরিককে যেন জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়। এবং যে সমস্ত আফগান শিখ ও হিন্দুরা ভারতে আসতে চাইছেন, তাঁদের আশ্রয় দেওয়া হয়। সেইমতো কাজ চলছে জোরকদমে। জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই কয়েকশো নাগরিককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া এখনও জারি। খোদ জয়শঙ্কর এই অপারেশনকে ‘কঠিন এবং জটিল’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। সরকার ও সেনার সম্মিলিত পরিকল্পনা ও অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সাহসের জোরেই তা সম্ভব হচ্ছে ক্রমশ। আর এই অপারেশনের নেপথ্যেও থেকে গেল সেই মাতৃআরাধনার রীতি। দেবীর শক্তিতে বলীয়ান হয়েই যেন কাজ করছেন সেনারা। তাই এর নাম দেওয়া হল ‘অপারেশন দেবী শক্তি’।