শিশুদের যৌন হেনস্তা। তাও আবার অনলাইনে। আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, প্রতি ১২ জনে ১ জন শিশু যৌন অত্যাচারের শিকার। আর কী জানাচ্ছে ওই গবেষণা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
যৌন নির্যাতন। তাও আবার অনলাইনে। যার শিকার মূলত শিশুরা। সমীক্ষায় উঠে আসা সংখ্যাটাও চমকে দেওয়ার মতো, প্রতি ১২ জনের মধ্যে একজন। এদের কারও বয়স ১০ বছরের বেশি নয়। কিন্তু তাতে কী! হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে সকলকেই। আর সেই আতঙ্ক আজীবন বয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছে এইসব ফুলেরা!
‘হাউ ওল্ড ওয়্যার ইউ?’
সাধারণ প্রশ্ন নয়। নেটদুনিয়ার এই ট্রেন্ড ভীষণ চেনা। যা ভাবতে বাধ্য করে! থামতে বাধ্য করে! যৌন নির্যাতন ঘৃণ্যতম অপরাধের মধ্যে গণ্য হতেই পারে, আর এক্ষেত্রে কথা হচ্ছে শিশু উপর হওয়া যৌন হেনস্তা নিয়ে। অপরাধীকে কোনও বিশেষণেই হয়তো ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। অথচ এই ঘটনা কতশত জীবনের অঙ্গ হিসেবে রয়ে গিয়েছে। চাইলেও বাদ দিতে পারেনি অনেকেই। তবে নেটদুনিয়ার এই ট্রেন্ডের দৌলতে জীবনের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা কেউ কেউ ভাগ করে নেন। রাস্তাঘাটে কিংবা নিজের বাড়িতে এরা যৌন হেনস্তা শিকার হয়েছেন। অবশ্যই ছোটবেলায়। যখন এইসব বোঝার মতো জ্ঞান হয়নি, সেইসময়ই অন্ধকার থেকে কালো হাত এসে ছুঁয়েছিল শরীর। মনে ছিল ভয়, তাই প্রতিবাদের সাহস হয়নি, এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে কেউ কিচ্ছুটি জানতেও পারেনি! ঘটনার কারণ যদি পরিবারের কেউ হন, তাহলে তো কথাই নেই! ‘কেউ বিশ্বাস করবে না, এই ভাবনায় চুপ থাকাই অভ্যাস করে নিয়েছিলেন কেউ কেউ। অনেকটা বড়বেলা অবধি সেই ক্ষত বয়ে বেড়াতে হয়েছে তাঁদের। শরীরে ছাপ না থাক, মনের গভীরে দীর্ঘদিন রয়ে গিয়েছে সেই অন্ধকার স্মৃতি। শিশু নির্যাতন বা অত্যাচারের ঘটনা সামনে এলে ফিরে আসে এইসব প্রসঙ্গ। এই নিয়ে চর্চা চলে রীতিমতো। সভা হয়, আলোচনা হয়, প্রতিকারের উপায়ও খোঁজা হয়। কিন্তু লাভের লাভ বোধহয় হয় না! অন্তত সাম্প্রতিক সমীক্ষায় সেই ছবিই ধরা পড়ল।
‘ল্যানসেট চাইল্ড এন্ড অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ’-এর গবেষণায় উঠে আসছে ভয়ঙ্কর তথ্য। গবেষকদের দাবি, বিশ্বব্যপী প্রতি ১২ জনের মধ্যে অন্তত একজন খুদে অনলাইন যোউন হেনস্তার শিকার। ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল অবধি মোট ১২৩ টি গবেষণার পর এই তথ্য তাঁরা সামনে এনেছেন। এখানেই শেষ নয়, জানা যাচ্ছে প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন শিশু যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছে অনলাইন ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে। এছাড়া বহু শিশুকে অনলাইনে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কাজে মদত দেওয়া হচ্ছে। নেপথ্যে যে সবসময় বাইরের কেউ থাকছেন তা নয়। বরং এক্ষেত্রেও পরিবারের সদস্যরাই গুপ্ত ঘাতকের ভূমিকায় থাকছেন অনেকসময়। আসলে, অতিমারি পরবর্তী সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনলাইনে কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে শিশুদের এই জগতে আনাগোনা বেড়েছে। আর তাতেই মাথা চাড়া দিচ্ছে নতুন সমস্যা। অবশ্য শিশুদের প্রতি হওয়া যৌন নির্যাতনকে নতুন কিছু বলা ভুল। অনলাইনে স্রেফ ধরণটা বদলেছে মাত্র। তবে সংখ্যাটা এমনই যে বিশেষজ্ঞরা অশনি সংকেত দেখছেন! অনলাইনে যদি এইভাবে যৌন শোষণের শিকার হয় শিশুরা, তবে বড় বয়সে তাদের জীবনে অনলাইন দুনিয়ার পরিচিতি অন্যভাবে হবে। বড় কোনও অপরাধ যে এর থেকে জন্ম নেবে না, এই আশঙ্কাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ হয়তো সম্ভব, কিংবা এমন কিছু এই এই মারাত্মক অপরাধের মাত্রা কিছুটা হলেও কমাবে। আপাতত সেই বিষয়েই আলোচনার ভাবনায় ওয়াকিবহাল মহল।