বিদেশের মাটিতে দেশের সমালোচনা করেছেন রাহুল গান্ধী, এই অভিযোগে সরব বিজেপি শিবির। এই প্রসঙ্গেই এবার অমিত শাহের কটাক্ষ, এমনকি ইন্দিরা গান্ধীও দেশের অন্দরের রাজনীতির কথা বিদেশে বলতেন না। ব্যক্তিগত পরিসর টেনেই এবার কংগ্রেস সাংসদকে তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঠিক কী বলেছেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দেশে যতই রাজনৈতিক তরজা চলুক না কেন, বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশের অন্দরের সেই রাজনৈতিক বিরোধিতাকে তুলে না আনাই উচিত। এই মর্মেই এবার রাহুল গান্ধীকে বিঁধলেন অমিত শাহ। তাঁর মতে, বিরোধিতার রাজনীতির উপরেও কিছু কথা থাকে। এমনকি দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী তথা রাহুলের পিতামহী ইন্দিরা গান্ধীও এই নীতি মেনে চলতেন বলেই দাবি শাহের। তাঁর সাফ কথা, দেশের অন্দরের রাজনীতির কথা কখনোই বিদেশে খোলাখুলি প্রকাশ করতে চাননি ইন্দিরা। এই প্রসঙ্গে শাহ জানিয়েছেন, জরুরি অবস্থার পর ইংল্যান্ডে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইন্দিরা। কিন্তু তাঁকে দেশের তৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাফ জবাব দেন, কিছু সমস্যা রয়েছে, কিন্তু এখানে আমি তা নিয়ে কিছু বলব না। অথচ তার ঠিক উলটো কাজই করেছেন রাহুল। অক্সফোর্ডে গিয়ে ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে মন্তব্যের জেরে এবার ব্যক্তিগত কথা টেনেই রাহুলকে তোপ দাগলেন শাহ।
আরও শুনুন: এবার বেদ পড়ার সুযোগ পাবেন মুসলিমরাও, নয়া প্রকল্প সংঘের
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবিতে অবশ্য এই বিষয়টি উঠে আসেনি যে, ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন শাসক দলের মুখ। ফলে বিদেশের সামনে দেশের যে ছবি তিনি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, তা এক অর্থে তাঁর সরকারের রিপোর্ট কার্ডও বটে। কিন্তু কংগ্রেস গদি হারানোর পরে রাহুল গান্ধী বিরোধী শিবিরেরই অন্তর্ভুক্ত। দেশে বা দেশের বাইরে তাই বারবারই মোদি সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। যেমনটা দেখা গিয়েছে তাঁর সাম্প্রতিক ব্রিটেন সফরেও। মোদি জমানায় ভারতে গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের কথাই বারে বারে বলেছেন রাহুল। এমনকি হাউস অব কমন্সে কথা বলতে গিয়ে তিনি যখন দেখেন মাইক্রোফোন খারাপ, সেই সময়ে রাহুল বলেছিলেন, ভারতীয় সংসদে কিন্তু মাইক খারাপ হয়নি। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কণ্ঠরোধ করা হয়েছে বিতর্কের।
আরও শুনুন: ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ থেকে উত্থান মা কালীর! ভিনদেশির ‘বিকৃত’ ভাবনায় চটে লাল ভারতীয়রা
রাহুলের এই মন্তব্যের পরেই তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনার দাবিতে সুর চড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। লোকসভায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শাসক দলের সাংসদেরা। এই পরিস্থিতিতে এবার মুখ খুললেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর দাবি, রাহুল-সহ বিরোধী নেতারা সংসদে কণ্ঠরোধ করার যে অভিযোগ তুলেছেন, তার কোনও ভিত্তি নেই। সংসদীয় রাজনীতির নিয়মকানুন মেনেই অধিবেশনে তর্কবিতর্ক চলে। সেখানে নিছক পথচলতি ঝগড়ার মতো করে কোনও বিতর্ক হতে পারে না। রাহুলের বাবা কিংবা ঠাকুমার সময়েও এই নিয়ম লাগু ছিল, এবং তাঁরাও তা মেনেই বিতর্কে অংশ নিতেন বলে কংগ্রেস নেতাকে পালটা তোপ দেগেছেন শাহ। এমনকি সমস্যার মীমাংসা করার জন্য শাসক দল আলোচনায় আসতে ইচ্ছুক বলেই দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। কিন্তু বিরোধী দল কেবল গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলে স্লোগান দিতেই ব্যস্ত, মীমাংসার কোনও উদ্যোগ নেয়নি তারা। যদিও সম্প্রতি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য স্পিকারের কাছে কথা বলার সুযোগ চেয়েছিলেন রাহুল। তার প্রেক্ষিতে ইতিবাচক জবাব মেলেনি বলেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন হাত শিবিরের নেতা। এই পরিস্থিতিতে অমিত শাহের মন্তব্যে বিতর্ক আরও ঘোরালো হয়ে উঠল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।