বিয়ে করবেন প্রেমিকাকে। তবে, বাধা একটা ছিলই। মনেও ছিল দ্বিধা। তবে, প্রেমের টানে সে বাধাও কাটল। শেষমেশ লিঙ্গ পরিবর্তন করেই অবশেষে হল মালাবদল। আসুন শুনে নেওয়া যাক অলকা থুড়ি অস্তিত্বর সেই অন্যরকম প্রেমের গল্প।
তাঁর নাম ছিল অলকা। কিন্তু নিজেকে যখন চিনতে শিখলেন, তখন থেকেই বুঝতে পারলেন যে তিনি নারী নন। বহিরঙ্গে যা-ই হোক না কেন, অন্তরে তিনি একজন পুরুষই। সেরকম ভাবেই চলছিল জীবনযাপন। মন দেওয়া-নেওয়া পর্ব সারা হয়েছিল এক নারীর সঙ্গেই। তবে, আনুষ্ঠানিক বিয়েটা আর করা হয়ে ওঠেনি। অবশেষে ৪৭-এর জন্মদিনে এসে লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হয়েই বিয়ে করলেন তাঁর প্রেমিকাকে।
আরও শুনুন: পালটা লাভ জিহাদ! ‘বিয়ের জন্য মুসলিম মেয়েদের অপহরণ করছে হিন্দুরা’, বিস্ফোরক দাবি কেরলে
সমকামী বিয়ে নিয়ে জটিলতা এখনও চলছে। তবে, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে, রূপান্তরকামীরা যদি হেটরোসেক্সুয়াল সম্পর্কে থাকেন, তবে তাঁরা বিয়ে করতেই পারেন। এবং সেই বিয়ে বৈধ। তা নিয়ে কোনও অস্পষ্টতার জায়গাই নেই। মনে মনে তো পুরুষই ছিলেন ‘অলকা’। আর পুরুষ হয়েই তিনি প্রেমিকার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়তে চাইছিলেন। অতএব পুরোপুরি পুরুষ হওয়ার জন্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন তিনি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করেন। অলকা হয়ে ওঠেন অস্তিত্ব। ৪৭-এর জন্মদিনে পৌঁছেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ঠিক করেন প্রেমিকা আস্থাকে বিয়ে করবেন। সেই মতো ইন্দোরের ডেপুটি কালেক্টরের কাছে একটি আবেদন করেন তাঁরা। তাঁদের বিয়ে ও সম্পর্কের বিশদ ব্যাখ্যা দেন প্রশাসনের কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই, এ বিয়েতে কোনও আপত্তি জানায়নি প্রশাসন। তাঁদের আবেদনপত্র গৃহীত হয়। অতএব ধুমধাম করে সারা হল বিয়ে। একেবারে রীতি মেনে সাত পাকে ঘুরে, মালাবদল করেই আস্থার সঙ্গে দাম্পত্যে বাঁধা পড়লেন অস্তিত্ব। ইতিমধ্যে ম্যারেজ সার্টিফিকেটও পেয়েছেন তাঁরা। তাতে সাক্ষ্য দিয়েছেন দুই পরিবারের দুজনে।
আরও শুনুন: ওষুধ যথেষ্ট নয়! রোগ সারাতে রামায়ণ-গীতা পাঠের ‘প্রেসক্রিপশন’ যোগীরাজ্যের চিকিৎসকের
দীর্ঘদিনের সম্পর্ক যে দাম্পত্যে বাঁধা পড়ল তাতে খুশি আস্থা। অস্তিত্ব যখন অলকা ছিলেন, তখন তাঁর বোনের বন্ধু হিসাবেই শুরু হয়েছিল বাড়িতে যাতায়াত। কিছুদিন পরেই আস্থা বুঝতে পারেন, অলকা আসলে একজন পুরুষ। ভালোও বেসে ফেলেন তাঁকে। সম্পর্কের ব্যাপারে তাঁদের মনে কোনও দ্বিধা ছিল না। তবে, বিয়েটা এতদিন নানা কারণেই হয়নি। অস্তিত্ব খানিকটা হয়তো দ্বিধায় ছিলেন। নানা রকম ভাবনাচিন্তা করছিলেন। তবে, ৪৭-এর জন্মদিনে এসে সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে দেন। প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেন যে, তিনি লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হয়ে উঠবেন। আস্থাও সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেন। তারপরই সার্জারি। অলকার অস্তিত্ব হয়ে ওঠা এবং শেষমেশ মালাবদল। সবথেকে বড় কথা, দুজনের বিয়েতে সায় দিয়েছে তাঁদের পরিবারও। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট দেশে আছে বটে, তবে অনেকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। অস্তিত্ব আর আস্থার এই দৃঢ় পদক্ষেপ হয়তো আরও অনেককেই দ্বিধা ঝেড়ে সম্পর্ককে পরিণতি দিতে আলো দেখাবে।