আফগানিস্তানের মেয়েদের জন্য নয়া ফতোয়া জারি করল তালিবান। রেডিও-টিভিতে আর সঞ্চালনা করতে পারবেন না মহিলারা। এমনকী, বন্ধ হয়ে গেল গানবাজনার সম্প্রচারও।
আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর থেকেই নেমে আসছিল একের পর এক নারীবিরোধী ফতোয়া। কুড়ি বছর আগেকার মতোই। সেই তালিকায় এবার নয়া সংযোজন। আফগানিস্তানের টিভি-রেডিওয় আর শোনা যাবে না কোনও নারীকণ্ঠ। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেল গানের সম্প্রচারও। এমনকী মেয়েদের কোনও পুরুষ পড়াতে পারবে না বলেও জারি হয়েছে ফতোয়া।
আরও শুনুন: ‘আপত্তিজনক’ ছবিতে হিন্দু দেব-দেবীর ‘অপমান’, অভিযোগে ‘কামসূত্র’-এ আগুন বজরং দলের সদস্যদের
তালিবানের দেশ দখলের পূর্বাভাস পেতেই বাড়ছিল উদ্বেগ। তালিবান শাসনে কী অবস্থা হবে আফগানভূমের মহিলাদের, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বর উঠছিল আন্তর্জাতিক মহল থেকেও। একাধিকবার এ প্রসঙ্গে আশঙ্কিত বক্তব্য রেখেছেন তালিবানি হামলার শিকার, বিশ্বের কনিষ্ঠতম নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। সত্যি হল সেইসব আশঙ্কাই। স্পষ্ট হয়ে গেল, মুখে যাই বলুক, কুড়ি বছর পরেও বিন্দুমাত্র বদলায়নি তালিবান। ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এর বাইরে অন্য কোনও মানবিক প্রবৃত্তি বা গুণ, শিল্প-সঙ্গীত-কাব্য- কোনও কিছুরই কোনও গুরুত্ব তাদের কাছে আদৌ নেই। আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন কায়েমের পরই সমস্ত শিল্পচর্চার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবুও আশায় বুক বাঁধছিলেন আফগানভূমের মানুষ, অন্তত গণমাধ্যমের বিনোদনটুকু যদি বজায় থাকে। রবিবার ভেঙে গেল সে আশাও। গানবাজনার সম্প্রচার বন্ধ করার কড়া নির্দেশ জারি হল দেশে। রেডিওতে সম্প্রচারিত হবে না কোনও মহিলা কণ্ঠস্বর। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যাবে না কোনও মহিলার মুখ। কান্দাহার প্রদেশের রেডিও, টেলিভিশনে সঞ্চালনা কিংবা অন্য কোনও ক্ষেত্রে মহিলাদের কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল তালিবান।
আরও শুনুন: আফগানিস্তানের নয়া আতঙ্কের নাম ISIS-Khorasan, কী রহস্য রয়েছে এর আড়ালে?
শনিবার রাতে আফগানিস্তানের খ্যাতনামা লোকসংগীত শিল্পী ফওয়াদ আন্দরাবিকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। পরে প্রকাশ্যেই তাঁকে খুন করা হয়। এর আগে নজর মহম্মদ নামে এক কৌতুকশিল্পীকেও নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল তালিবান। বলাই বাহুল্য, প্রাণের আশঙ্কায় থেমে যাচ্ছে আফগানভূমের সব স্বর, সমস্ত সুর। আর নয়তো নিজের স্বর বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে ছাড়তে হচ্ছে দেশ। যেমন ছেড়েছেন আফগানিস্তানের বহুচর্চিত পপ-তারকা আরিয়ানা সইদ। তালিবান বাহিনীর কাবুল দখলের প্রাক-মুহূর্তে আফগানিস্তান ছেড়েছিলেন তিনি। দেশ ছেড়েছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এবং পরিচালক রোয়া হায়দরিও। ২৬ আগস্ট কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগেই তিনি টুইটারে লেখেন, ‘দেশ ছেড়ে চললাম। দেশের জন্য প্রতিবাদের স্বর ফিরে পাব বলে।’ অবশ্য রবিবার ন্যাটো বাহিনীর শেষ বিমান আফগানিস্তান ছাড়ার পর বন্ধ সে রাস্তাও। আগেই বন্ধ হয়েছিল সড়কপথ। এবার বিমানবন্দরও সিল করে দিয়েছে তালিবান।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।