পূর্বসূরীদের কেউ জেতেননি। তিনি নিজেও জিতবেন না। একথা ভালমতো জানেন এবং বিশ্বাস করেন। তবু লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে নারাজ যোগীরাজ্যের বাম প্রার্থী। ঠিক কিসের টানে ভোটের ময়দানে নামছেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সব লড়াই জেতার জন্য নয়। কিন্তু এই উক্তি কি রাজনীতির সঙ্গে যায়? চলতি লোকসভা নির্বাচনে নেতাদের প্রচার দেখে এমনটা বলার জো নেই। কিন্তু যোগীরাজ্যের বাম প্রার্থীকে দেখলে এমনটা মনে হতেই পারে। কোওভাবেই জিতবেন না জেনেও ভোটের ময়দানে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন তিনি।
আপাতভাবে দেখলে উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী লড়াই মূলত তিনটি দলের মধ্যে। বিএসপি, এসপি এবং বিজেপি। বর্তমানে রাজ্যের শাসকদল বিজেপি। সেই হিসেবে অনেকেই ধরে নিচ্ছেন লোকসভায় পাল্লা ভারী থাকবে গেরুয়া শিবিরের। সমাজবাদী পার্টির তাও বা সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বামেদের যোগীরাজ্যে খাতা খোলাও দায় হবে বলেই মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা। একথা সে রাজ্যের বাম প্রার্থীরাও জানেন ভালমতো। কিন্তু তাতে কি! ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়াটাই বড় কথা। সেই যুক্তিতেই চলতি নির্বাচনের অন্যতম যোদ্ধা গঙ্গা ডিন। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের লালগঞ্জ কেন্দ্রের বাম প্রার্থী তিনিই। এমন নয় যে যোগীরাজ্যের এই কেন্দ্র বামেদের গড় হিসেবে পরিচিত। এর আগে এখান থেকে মাত্র ১ বা ২ শতাংশ ভোটই পেয়ে এসেছেন বাম প্রার্থীরা। তবু এখান থেকেই প্রার্থী হয়েছেন গঙ্গা। তাঁর কথায়, নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব। তাতে শামিল হওয়াটাই আসল কথা। অর্থাৎ জেতা হারা নিয়ে কার্যত কোনও মাথা ব্যথা নেই তাঁর।
সংবিধান যাই বলুক, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাত নিয়ে ভেদাভেদ রয়েছেই। যোগীরাজ্য তার অন্যতম উদাহরণ বলা যায়। বাম প্রার্থী গঙ্গা নিজেও এর শিকার হয়েছেন বারবার। কিন্তু বাম রাজনীতিতে এমনটা হয় না বলেই দাবি গঙ্গার। প্রথমবার বামেদের কোনও এক ছাত্র আন্দোলনের গিয়েই তাঁর সেই ধারণা জন্মেছিল। সেখান থেকেই লাল শিবিরে যাতায়াত শুরু করেন গঙ্গা। এরপর নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে। সাধারণ সমর্থক থেকে দলের কর্মী হয়ে ওঠেন গঙ্গা। সেখান থেকে বাম মনোনীত প্রার্থী। তাঁর কথায় ভোটের হিসাব যাই বলুক, তাঁর দল কাজের দিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে। ভোটের সময় জাতের প্রসঙ্গ চলে আসায়, খেলা অন্যদিকে ঘুরে যায়। কিন্তু বছরভর সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাঁদের জন্য লড়াই করে সেই বামেরাই। এমনটাই দাবি গঙ্গা ডিনের। তবে একসময় ছবিটা এমন ছিল না। ষাটের দশকে উত্তরপ্রদেশে বেশ কিছু কেন্দ্র বামেদের দখলেই থাকত। তবে ধীরে ধীরে বামেদের ক্ষমতা কমতে থাকে। ১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর যা একেবারেই বদলে যায় বলেই দাবি গঙ্গার। এর মধ্যে অন্য দলে যোগ দেওয়ার ডাকও পেয়েছেন। প্রায় অস্তিত্ব না থাকা বাম শিবির ছেড়ে বেরিয়ে আসার প্রস্তাবও বারবার পেয়েছেন গঙ্গা। কিন্তু এমনটা করার কথা ভাবনাতেও আনেননি বলেই তাঁর দাবি। বরং মানুষের হয়ে কাজ করার জন্য এই দলই আদর্শ জায়গা বলে মনে করেন তিনি। তাই চলতি নির্বাচনে হারবেন জেনেও ময়দান ছাড়তে নারাজ যোগীরাজ্যের বাম প্রার্থী।