হিন্দু-মুসলমান বিভাজনে প্রশ্রয় দিচ্ছেন মোদি। এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। অন্যদিকে সেই মুসলিমরাই মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল বের করছেন। নেহাতই আবেগের বশে? নাকি নির্দিষ্ট কারণ আছে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভোটের হাওয়ায় হিন্দু-মুসলমান বিভাজন প্রসঙ্গ টেনেছেন নরেন্দ্র মোদি। অথচ তিনি বলছেন, তাঁর রাজনীতিতে এরকম কোনও ভাবনাই নেই। কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধীরা তো এই ইস্যুতে রীতিমতো আক্রমণ শানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। আর ঠিক সেই আবহেই কাশীতে ধরা পড়ল অন্য ছবি। সেখানে মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল করলেন মুসলিমরাই। সে মিছিলে পা মেলালেন মুসলিম মহিলারাও।
আরও শুনুন:
পাকিস্তানেরও যদি একজন মোদি থাকতেন! আক্ষেপ পড়শি দেশের ব্যবসায়ীর
এই মিছিলে যে প্ল্যাকার্ড হাতে করে বেরিয়েছিলেন তাঁরা, তার বয়ানও চোখে পড়ার মতো। সেখানে মোদিকে শুধু ধন্যবাদই জানানো হয়নি। তাঁর বিরোধীরা যাতে পরাজিত হন, সে প্রার্থনাও জানিয়েছেন তাঁরা। এদিকে গোটা দেশের রাজনীতি হিন্দু-মুসলমান বিভাজন প্রসঙ্গে উত্তল। আর ঘটনাচক্রে সে ঘটনার সূত্রপাত মোদির একটি বক্তব্যেই। রাজস্থানে এই ভোটের প্রচারের সময়ই তিনি কংগ্রেসের ইস্তাহারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান। সেখানে তিনি বলেন, কংগ্রেসের পরিকল্পনা হল মানুষের অর্জিত সম্পত্তি বিলিয়ে দেওয়া। কাদের মধ্যে? না, যাঁরা অনুপ্রবেশকারী এবং যাঁদের বেশিসংখ্যক সন্তান আছে তাঁদের মধ্যে। প্রসঙ্গক্রমে মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। আর তাতেই জমে ওঠে বিতর্ক। বিরোধীদের বক্তব্য, কৌশলে মুসলমানদের বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানিয়েছেন মোদি। অন্যদিকে মোদির বক্তব্য, তিনি মুসলিমদের কথা বলেননি। তাঁর রাজনীতির ধরনেই এরকম বিভাজন কখনও থাকে না। তিনি সামগ্রিক ভাবে গরিবদের কথাই বলেছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আদৌ মুসলিমরা তাঁকে ভোট দেবেন কি-না সে বিষয়ে। উত্তরে তিনি সম্প্রদায় পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন মানুষে। এর আগে তিনি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভেবেচিন্তে ভোট দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন।
আরও শুনুন:
হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গ টানেনইনি! মোদির কথা কি তবে ভুল বুঝেছে মানুষ?
একদিকে যখনে এই চর্চা, তখন কাশীর মুসলিম বাসিন্দাদের এই উদ্যোগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, শুধু আবেগের বশে যে মোদিকে তাঁরা ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, তা নয়। এর জন্য নির্দিষ্ট কারণও সামনে এনেছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রাচীন এই শহরটি এখন যে আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠেছে, তা মোদির কল্যাণেই। স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁদের যা সমস্যা ছিল তা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের জন্য দূর হয়েছে। আর সবথেকে বড় কথা, তিন তালাকের হাত থেকে মুক্তি মিলেছে মুসলিম মহিলাদের। তাঁরা বলছেন, তালাক দিয়ে ঘরছাড়া করার দিন এখন শেষ। মোদি তাই তাঁদের কাছে মুক্তিদাতা হয়েই ধরা দিয়েছেন। তা ছাড়া জল, বিদ্যুতের পরিষেবা নিয়ে যা অসন্তোষ ছিল তাও দূর করে দিয়েছেন মোদি। ধন্যবাদ জানানোর আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। মোদির সময়ে বেনারসের পর্যটন অনেক বেড়েছে। তার ফলে অনেকে রুটিরুজি উপার্জনের দিশ খুঁজে পেয়েছেন। অর্থাৎ এমপ্লয়মেন্টের দিক থেকেও উন্নতির যে কৃতিত্ব তা মোদিকেই দিতে চান তাঁরা। আর তাই সম্প্রদায়গত ভাবে মুসলিম হয়য়েও মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল বের করতে দ্বিধা করেননি তাঁরা।
একদিকে হিন্দু বনাম মুসলমান নিয়ে দেশে রাজনৈতিক চর্চা। অন্যদিকে কাশীর মুসলিমদের মোদির সমর্থনে মিছিল। এই দুই ছবিই যেন প্রকৃত অর্থে তুলে ধরছে আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা।