৫০০ বছরের পুরনো মন্দির। সেখানে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। তৈরির দাবি তুলেও লাভ হয়নি। তাই মন্দিরে যাওয়াই কমিয়ে দিচ্ছিলেন ভক্তরা। অবশেষে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন দুই মুসলিম ব্যক্তি। ধর্ম বিশ্বাস আলাদা হলেও মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা তৈরির জমি দিলেন তাঁরাই। কোথায় দেখা গেল এমন সম্প্রীতির নজির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হিন্দু বনাম মুসলিম, বর্তমান দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্যতম জ্বলন্ত ইস্যু এটাই। কখনও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি নিয়ে বিজেপির দিকে উঠছে অভিযোগের আঙুল, তো কখনও কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহারে মুসলিম লিগের ছাপ রয়েছে বলে তোপ বিজেপির। সম্প্রতি সংরক্ষণ প্রসঙ্গেও বারবার এই ইস্যু টেনেই আক্রমণ শানিয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা খানিক আলাদা।
নেতারা যাই বলুন, বাস্তবে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের ছবিটা একেবারেই অন্যভাবে ধরা পড়ছে। উত্তরের এক হিন্দু মন্দিরের কথাই ধরা যাক। আমাদের দেশে প্রাচীন মন্দিরের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। এমনই এক মন্দির কাশ্মীরের রেশাই জেলায় অবস্থিত। স্থানীয়দের মতে এই মন্দির ৫০০ বছরের পুরনো। অনেকেই চারধাম যাত্রা সেরে এই মন্দিরের উদ্দেশে রওনা দেন। যার জন্য গুপ্ত কাশী থেকে এখানে যাওয়ার পথও রয়েছে। কিন্তু সে পথ রয়েছে নামেই। এমনিতে পাহাড়ি রাস্তা ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না হলে বেহাল হতে বাধ্য। রেশাই-এর গৌরি শঙ্কর মন্দিরের রাস্তাটিরো সেই অবস্থা। অনেকেই দাবি জানিয়েছেন রাস্তা তৈরির। কিন্তু তেমন লাভ হয়নি। প্রথমত খরচ, আর দ্বিতীয়ত রাস্তা তৈরির জন্য জমির অভাব। তাই অনেকেই মন্দিরের রাস্তা ভুলত বসেছিলেন। এভাবে চলতে থাকলে প্রাচীন মন্দিরও অচিরেই ভোলার তালিকায় ঢুকে পড়ত। তাই সেখানকার স্থানীয় পঞ্চায়েত উপায় খোঁজার জন্য আলোচনা সভা ডাকে। শুধু মন্দিরের রাস্তা তৈরি নয়, সামগ্রিক ভাবে এলাকার উন্নতি নিয়েই আলোচনা করার ঠিক হয়। তাই প্রায় গ্রামবাসীই সেখানে অংশ নেন। আলোচনায় মন্দিরের প্রসঙ্গ উঠতেই সবাই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। সরকারি পদক্ষেপ ছাড়া কিছুই যে করা সম্ভব নয়, এমনটা ধরে নেন সকলে। এইসময় এগিয়ে আসেন এলাকার দুই মুসলিম বাসিন্দা। সকলের সামনে তাঁরা প্রস্তাব রাখেন মন্দিরের রাস্তা তৈরির জন্য জমি দেবেন তাঁরাই। অল্প নয় একেবারে ১২০০ মিটার রাস্তা তৈরি হবে এমন পরিমাণের জমিই দান করার কথা বলেন তাঁরা। যার বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক কোটি। শুধু কথা দেওয়া নয়, বাস্তবে ওই জমি দানও করেন তাঁরা।
আসলে এই মন্দির যে কতটা প্রাচীন তা ভালমতো জানেন এলাকার মুসলিমরাও। ধর্ম বিশ্বাস আলাদা হলেও মন্দির নিয়ে কোনও বিরোধ নেই তাঁদের মনে। তাই মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা তৈরিতেও মুসলিমরাই নিঃস্বার্থ ভাবে জমি দান করেন। জানা গিয়েছে, শীঘ্রই পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ওই মন্দিরের রাস্তা তৈরি হবে। একইসজ্ঞে প্রাচীন মন্দির সংস্কারের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পঞ্চায়েত। আগামীদিনে ভক্তরা যেন এই মন্দিরে সহজে পৌঁছতে পারেন তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা। সেইসঙ্গে দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যকেও টিকিয়ে রাখার প্রয়াস মাত্র।