সারাতে হবে গ্রামের প্রাচীন মন্দির। তাই নিজেরাই চাঁদা তুলে এগারো লাখ টাকা অনুদান দিলেন গ্রামের মুসলিম বাসিন্দারা। দেশজোড়া অসহিষ্ণুতার আঁচের মধ্যেই সম্প্রীতির নয়া নজির গড়লেন তাঁরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গ্রামের চামুণ্ডা মাতার মন্দিরের জরাজীর্ণ দশা। সেই পুরনো মন্দির সারানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। সেই উদ্যোগে স্বেচ্ছায় শামিল হলেন গ্রামের মুসলিম বাসিন্দারাও। নিজেরাই চাঁদা তুলে মোট ১১ লক্ষ টাকা অনুদান দিলেন তাঁরা। আর কেবলমাত্র আর্থিক সাহায্যই নয়, নতুন মন্দিরের কাজেকর্মেও খুশিমনেই যোগ দিয়েছেন তাঁরা। গুজরাটের এই ঘটনাকে সম্প্রীতির অভিনব নিদর্শন বলেই মানছেন সকলে।
আরও শুনুন: ‘আপনি চাইলে বিকিনি পরুন, আমাদের মেয়েদের হিজাব খুলতে হবে কেন?’- হিজাব বিতর্কে মন্তব্য ওয়েইসির
কী ঘটেছে ঠিক?
জানা গিয়েছে, গুজরাটের সিধপুর এলাকার কাছাকাছি দেথলি গ্রামে ঘটেছে এই ঘটনা। বছরখানেক আগে ওই গ্রামের পুরনো চামুণ্ডা মন্দিরটি মেরামত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এলাকার মানুষেরা। সম্পূর্ণ মন্দির মেরামত করতে প্রায় এক কোটি টাকার প্রয়োজন ছিল বলেই জানা গিয়েছে। সেই কারণেই ঘুরে ঘুরে চাঁদা সংগ্রহ করছিলেন গ্রামবাসীরা। এই সময়েই এই উদ্যোগে শামিল হন গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরাও। গ্রামের ৬০০০ বাসিন্দার মধ্যে ৩০ শতাংশই মুসলিম। ধর্ম আলাদা হলেও, গ্রামেরই একটি পুরনো স্মৃতিচিহ্নকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগে তাঁরা পিছিয়ে থাকেননি। তাঁদের দেওয়া মোট অনুদানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ লক্ষ ১১ হাজার একশো এগারো টাকা। গ্রামের আগাখান মোমিন সম্প্রদায়ের প্রধান আকবর মোমিন জানিয়েছেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এই গ্রামে কখনোই কোনোরকম সাম্প্রদায়িক হিংসা বা বিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটেনি বলেই জানিয়েছেন তিনি। তাই কেবল আর্থিক অনুদান দিয়েই তাঁরা থেমে থাকেননি। মন্দির মেরামতের পর সম্প্রতি তিন দিন ব্যাপী এক যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে সেখানে। সেই বিপুল আয়োজনের শরিক গ্রামের মুসলিম অধিবাসীরাও। মন্দির চত্বরেই চা-কফির একটি দোকান দিয়েছেন তাঁরা। আর সেখান থেকেই মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে চা বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার কাপ চা এইভাবে বিতরণ করা হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। এমনকি এই কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্যও মন্দির কর্তৃপক্ষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনায় হিন্দু ভক্তদের তরফ থেকেও কোনোরকম বিরোধিতা আসেনি বলেই স্পষ্ট জানিয়েছেন গ্রামপ্রধান বিক্রমসিং দরবারও।