অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে বদলে যাবে মুসলিম সমাজের নিয়ম-কানুন। এমনকী আঘাত আসবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জাতিসত্তায়। এই মর্মে অভিন্ন বিধির বিপক্ষে সওয়াল করছে মুসলিম সংগঠনগুলি। কিন্তু এ বিষয়ে কী মত মুসলিম মহিলাদের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এক পরিবারের সকলের জন্য আলাদা নিয়ম থাকতে পারে না। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে এভাবেই সওয়াল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে আপত্তি উঠেছে। পালটা মত প্রকাশ করেছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। তাঁর দাবি ছিল, পরিবারের মধ্যেও বৈচিত্র থাকে। এক পরিবার মানেই এক নিয়ম হবে, এমনটা বলা যায় না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ মুসলিম মহিলাই এক পরিবারে এক নিয়মের পক্ষেই মত দিয়েছেন।
আরও শুনুন: অভিন্ন বিধি নিয়ে যত সমস্যা ভারতে! ব্যক্তিগত আইন বদলেছে ইসলাম-প্রধান দেশগুলিও
সম্প্রতি এই বিষয়ে সমীক্ষা করেছিল এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। ২৫টি রাজ্য জুড়ে প্রায় ৮ হাজার মুসলিম মহিলাদের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। সেখানে দেখা যায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে মুসলিম সংগঠনগুলি যত আপত্তিই তুলুক না কেন, তা গ্রাহ্য করছেন না মুসলিম মহিলারা। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, অন্তত ৬৭ শতাংশ মুসলিম মহিলা মনে করছেন যে, ব্যক্তিগত নিয়মকানুনের ক্ষেত্রেও গোটা দেশে অভিন্ন বিধি থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশেষত, বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে একই দেশে আলাদা আলাদা আইন থাকা কাম্য নয়। ৭৬ শতাংশ মুসলিম মহিলা স্পষ্ট ভাবেই জানিয়েছেন যে, মুসলিম পুরুষদের বহুগামিতা কোনওভাবেই অনুমোদন যোগ্য নয়। এক পুরুষ চারবার বিয়ে করতে পারেন, এরকম নিয়মের বৈধতাকে নাকচ করছেন তাঁরা। সবথেকে বেশি সমর্থন অবশ্য এসেছে উত্তরাধিকারের প্রশ্নে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার থাকা উচিত, এমন মত দৃঢ় ভাবে জানিয়েছেন অন্তত ৮২ থেকে ৮৬ শতাংশ মুসলিম মহিলা। বিবাহবিচ্ছেদের পর পুনরায় বিয়ের ক্ষেত্রে কোনওরকম বাধা থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন অন্তত ৭৪ শতাংশ মুসলিম মহিলা। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়িয়ে ২১ বছর করা হোক, এমনতা জানাচ্ছেন অন্তত ৭৯ শতাংশ মুসলিম মহিলা।
আরও শুনুন: সংখ্যালঘুরা বেশি সুবিধা পেয়েছেন মোদির আমলেই! কোন তথ্যে এমন দাবি বিজেপি নেতার?
এই সমীক্ষা স্পষ্টই জানাচ্ছে যে, অভিন্ন বিধির পক্ষে সায় আছে মুসলিম মহিলাদের। বিশেষত পারিবারিক ও ব্যক্তিগত আইনের ক্ষেত্রে যে সব বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা বহুকাল ধরে, অভিন্ন বিধি চালু হলে তা কেটে যাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। শিক্ষিত মুসলিম মহিলাদের মধ্যেই এই মত আরও স্পষ্ট। তবে সামগ্রিক ছবিটিও একই কথা বলছে। ফলত অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিপক্ষে আপত্তি জানাচ্ছে যে মুসলিম সংগঠনগুলি, তারা কি আদৌ মুসলিম মহিলা সমাজের মুখপাত্র? এই সমীক্ষা সে প্রশ্নও তুলে দিয়েছে। ইসলাম-প্রধান দেশগুলিতেও বিভিন্ন সময়ে এই ব্যক্তিগত আইনে সংস্কার হয়ছে। পাকিস্তান, ইজিপ্ট, তিউনিসিয়ার মতো দেশও প্রয়োজন অনুসারে এই বিধিতে সংস্কার এনেছে। ভারতে অভিন্ন বিধি চালু হওয়া যে সেই সংস্কারের দিকেই এগিয়ে যাওয়া, সমীক্ষায় উঠে আসা মুসলিম মহিলাদের মতামত স্পষ্ট করে যেন সে-কথাই জানান দিচ্ছে।