বিবাহবিচ্ছেদের পর খোরপোশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে স্ত্রীর। আর মুসলিম মহিলারাও সে অধিকার দাবি করতে পারেন। সাফ জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
খোরপোশ পাওয়া স্ত্রীর অধিকারের মধ্যেই পড়ে। খোরপোশকে যদি স্বামীরা তাঁদের স্ত্রীর প্রতি দাক্ষিণ্য বা খয়রাতি ভাবেন, তবে ভুল করবেন, মত সুপ্রিম কোর্টের। আর সেই অধিকারে হিন্দু মহিলাদের মতোই শামিল মুসলিম মহিলারাও। দেশের শীর্ষ আদালত এবার স্পষ্ট জানিয়ে দিল, দেশে যে খোরপোশ আইন চালু রয়েছে, তা সমস্ত ধর্মের মহিলাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন ও বিচারপতি অগাস্টাইন জর্জ মাসির ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলেই মনে করছেন সকলে।
আরও শুনুন:
হিন্দুদের অপমান করেছেন রাহুল? বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে কংগ্রেস নেতার পাশে শঙ্করাচার্য
বস্তুত, গৃহবধূদের টাকা দেওয়া নিয়ে যেন একধরনের অস্বস্তি জারি আছে গোটা সমাজেই। গৃহশ্রমকে শ্রম বলে যেমন ভেবেই উঠতে পারেন না অনেকে, তেমনই অনেকেই মনে করেন গৃহবধূদের কোনও টাকা দেওয়া মানে তা শ্রমের মূল্য নয়। তা স্রেফ ভিক্ষা বা খয়রাতি, সে স্বামীই দিন কি সরকার। ভোটের বাজারেও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার জাতীয় সরকারি ভাতা নিয়ে বারেবারেই এহেন কথা শোনা গিয়েছে। ঠিক সেরকমই, বিবাহবিচ্ছেদের পর স্ত্রীর খোরপোশের দাবি নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিল, খোরপোশকে দাক্ষিণ্য বা খয়রাতি বলে ভাবার কোনও কারণ নেই। এটা যে কোনও বিবাহিত মহিলার অধিকার। এদিকে শরিয়ত আইনের আলাদা প্রয়োগের কারণে মুসলিম মহিলাদের ক্ষেত্রে আইনি বিষয়গুলো আরও খানিক জটিল। আগে তিনবার মাত্র তালাক শব্দ উচ্চারণ করেই স্ত্রীর যাবতীয় দায়িত্ব অস্বীকার করা যেত। মোদি সরকারের আমলেই সেই তিন তালাক প্রথা রদ হয়েছে। এবার বিবাহবিচ্ছিন্না মুসলিম মহিলাদের অধিকারের বিষয়টিতেও জোর দিল খোদ সুপ্রিম কোর্ট।
আরও শুনুন:
বিয়ের ৪ মাস পরেই সিয়াচেন প্রাণ কাড়ল জওয়ানের, কীর্তিচক্র আঁকড়েই সান্ত্বনা খুঁজছেন স্ত্রী
আসলে সম্প্রতি স্ত্রীর খোরপোশের দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন মহম্মদ আবদুল সামসাদ নামে এক ব্যক্তি। মামলাটি এর আগে তেলঙ্গানার পারিবারিক আদালত থেকে তেলঙ্গানার হাই কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে। এবার সুপ্রিম কোর্টও খোরপোশ দেওয়ার রায়ই বহাল রাখল। আর সেই সূত্রেই আদালত জানিয়েছে, ভারতীয় খোরপোশ আইনে বলা আছে এক জন ব্যক্তি কখনোই তাঁর স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের প্রতি আর্থিক দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না। এর আগে, ১৯৮৫ সালের বহুচর্চিত শাহবানো মামলাতেও একই নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু ১৯৮৬ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার মুসলিম মহিলার বিবাহবিচ্ছেদের পরবর্তী অধিকার আইন প্রণয়ন করে। সেই আইনে বলা হয়, মুসলিম মহিলারা ওই খোরপোশ চাইতে পারবেন শুধু বিচ্ছেদের পরের ৯০ দিনের ‘ইদ্দত’-এর সময়টুকুতেই। তবে প্রায় বছর চল্লিশ পরেও বিবাহবিচ্ছিন্না মুসলিম মহিলাদের খোরপোশের অধিকারে স্বীকৃতি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ফের মনে করাল, গৃহবধূরা বাড়ি ও পরিবারের জন্য যে কাজ করেন, তার স্বীকৃতি হিসেবেই ওই টাকা তাঁদের প্রাপ্য।