ধর্মে মুসলিম। তাতে কি! রামনবমীর আরতিতে অংশ নেন স্বেচ্ছায়। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে আরাধনায় মেতে ওঠেন। তাতে সমস্যা খুঁজে পান না নাজনিন। তাঁর মতো আরও অনেক মুসলিম মহিলাই রামনবমীর পুজোয় অংশ নেন। ঠিক কোন বার্তা দিতে এমনটা করেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্র কেবল হিন্দুদের নন, মুসলিমদেরও পূর্বপুরুষ। রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে অযোধ্যা থেকে কাশী পর্যন্ত ঘুরে মুসলিমদের এ কথাই বোঝাতে চেয়েছিলেন দুই মুসলিম তরুণী। এবার তাঁরা অংশ নিয়েছেন রামনবমীর পুজোয়। আগের মতোই সম্প্রীতির বার্তা দিতে শামিল হয়েছেন হিন্দু উৎসবে।
রামনবমী উপলক্ষে বিশেষ উৎসবে মেতেছে গোটা দেশ। গেরুয়া পতাকায় ঢেকেছে অলিগলি। রাজনীতি জুড়ে উৎসবের ব্যাপকতা বেড়েছে ঠিকই, তবে এই কারণে অনেকেই বিষয়টা বাঁকা চোখে দেখছেন। ধর্মীয় উৎসবের নামে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি, রামনবমী সম্পর্কে এমনটাই মত আমজনতার একাংশের। সাম্প্রদায়িক প্রসঙ্গও এড়ানো যাচ্ছে না। সে তুলনা অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে। উৎসবের আড়ালে হিংসার খবর সামনে আসছে অহরহ। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে। মুসলিম হয়ে রামনবমীতে অংশ নিচ্ছেন, এমন ছবিও দেখা যাচ্ছে। বেনারসের কথাই ধরা যাক। সেখানে মহাসমারোহে রামনবমীর আয়োজন করেছে মহিলা পরিচালিত এক মুসলিম সংগঠন। নিষ্ঠাভরে রামের পুজো করেছেন তাঁরা। হিংসার ভিড়ে যা সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছে বইকি!
ফুল দিয়ে সাজানো সিংহাসন, রামের প্রতিকৃতিতে উপচে পড়ছে মালা। ‘জয় শ্রী রাম’ও লেখা আছে, তবে উর্দুতে। বেনারসের ওই মুসলিম মহিলা সংগঠন পরিচালিত রামপুজোর দৃশ্য খানিকটা এরকমই। সকলেই স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছেন তাতে। আসলে সংগঠন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নাজনিন আনসারি মনে করেন, রাম তাঁদের পূর্বপুরুষ। শুধু হিন্দু নয়, মুসলিমরাও তাঁরই উত্তরসূরি। আর সেই বার্তাই সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে, এই পুজোর আয়োজন। শুধু তাই নয়, পুজোর পাশাপাশি তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, বিতর্কিত ওয়াকফ বিল নিয়েও তাঁদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। অবশ্য এই প্রথম নয়, এর আগেও সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন নাজনিন। রামমন্দির প্রতিষ্ঠার আবহেও রামজ্যোতি নিয়ে কাশীযাত্রার কথা বলেছিলেন তিনি। তারও আগে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নাজনিন উর্দু ভাষায় অনুবাদ করেছেন হনুমান চালিশা এবং রামচরিতমানস। বরাবরই শান্তি এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামাজিক কাজকর্ম করে চলেন তিনি।
দেশজুড়ে যখন রামনবমীকে কেন্দ্র করে এত এত ভিন্নমত দেখা দিয়েছে, সেই আবহে রামনবমীর পুজোয় অংশ নিয়ে নজির গড়েছেন নাজনিন। যদিও একে বিশেষ কৃতিত্ব হিসেবে মানতে নারাজ তিনি। বরং এমনটাই তাঁর কর্তব্য বলে মনে করেন। একইভাবে ওয়াকফ নিয়েও মুসলিম সমাজকে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন। রামনবমীর পুজোয় মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে ছিলেন হিন্দুরাও। তাঁরাও এতে অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি। একসঙ্গে মিলেমিশে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ তাঁদের, এমনটা মুখে বলা নয় কাজে করে দেখাতে চান তাঁরা। আর তাই এত আয়োজন। সত্যি বলতে, ধর্মের আসল অর্থ তো ধারণ করা। সকলকেই তা ধারণ করতে পারে, সেখানে তো কোনও বিভেদ, কোনও বৈষম্য আসার কথা নয়। রামনবমীতে যতই সাম্প্রদায়িক বিবাদ বিতর্ক মাথা তুলুক না কেন, এই ঘটনা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, ঈশ্বর আসলে সকলেরই।