হিন্দু মুসলিম দুই ভিনধর্মের মধ্যে বিয়ে নিয়ে ঘোর আপত্তি হিন্দুত্ববাদীদের। কিন্তু সম্প্রতি উলটো ছবিই দেখা গেল কর্ণাটকে। সেখানে এক মুসলিম তরুণীর সঙ্গেই বিয়ে সারলেন বজরং দলের এক সদস্য। কী ঘটল তারপর? শুনে নিন।
‘লাভ জিহাদ’ ইস্যুতে মাঝে মাঝেই সরগরম হয়ে ওঠে দেশ। কোনও হিন্দু তরুণীর সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিয়েকে সবসময়েই এই তকমা দিতে চান হিন্দুত্ববাদীরা। কিন্তু এবার তাঁদের মধ্যে থেকেই অন্যরকম কাজ করে বসলেন এক যুবক। ওই যুবক নিজে বজরং দলের সদস্য। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তিনি নিজেই বিয়ে করলেন এক তরুণীকে, যিনি আবার ধর্মে মুসলিম। আশ্চর্যের কথা হল, এই বিয়েতে তেমন কোনও বিপত্তি আসেনি সংগঠনের পক্ষ থেকেও। উলটে দেখা গিয়েছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দের সঙ্গেই অংশ নিয়েছেন দলের অন্যান্য সদস্যও।
কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে, তা-ই কি একমাত্র সত্যি?
আরও শুনুন: পালটা লাভ জিহাদ! ‘বিয়ের জন্য মুসলিম মেয়েদের অপহরণ করছে হিন্দুরা’, বিস্ফোরক দাবি কেরলে
জানা গিয়েছে, ওই যুবকের নাম প্রশান্ত ভাণ্ডারী, আর তরুণীর নাম আয়েশা। তিন বছর ধরেই প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন তাঁরা। তরুণীর মায়ের কাছে বিয়ের জন্য সম্মতি চাইতেও গিয়েছিলেন ওই যুবক। কিন্তু মহিলা সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। আর এরপরেই সোজা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন যুগলে। সেইমতোই সম্প্রতি বিয়ে সেরেছেন তাঁরা। হিন্দু বিয়ের সাজে তাঁদের ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর সেই ছবিটিকে তুলে ধরেই হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, ইসলাম ধর্ম ছেড়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন ওই তরুণী। সেই সূত্রেই এই বিয়েকে ‘লাভ জিহাদে’র পালটা হিসেবেও দেখতে চাইছেন অনেকে। আর সেইখানেই উঠছে প্রশ্ন। ভিনধর্মে বিয়েতে বাধা না দিয়ে যে সেই বিয়েতে আনন্দের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা, তা কি এই পালটা লাভ জিহাদকে উদযাপন করতে চেয়েই? যুগলের মিলন নয়, আসলে ধর্মই কি বড় হয়ে উঠেছে এখানেও? এমনই নানা প্রশ্ন উঠে আসছে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায়।
আরও শুনুন: শিবাজির অভিষেক করেছিলেন পূর্বপুরুষ, বংশধরের কাঁধেই রামমন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠার গুরুদায়িত্ব
এমনিতে ভিন ধর্মে প্রেম কিংবা বিয়ে নিয়ে বারে বারেই সুর চড়াতে দেখা গিয়েছে হিন্দুত্ববাদীদের। ভিনধর্মে বিয়ে মানেই ধর্মনাশের চেষ্টা, এমন অভিযোগে মুসলিমদের দিকেই নিশানা করে থাকেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, আসলে হিন্দু মেয়েদের ভুলিয়েভালিয়ে বিয়ে করতে চায় মুসলিম ধর্মাবলম্বী পুরুষেরা। তারপর জোর করে মেয়েটির ধর্মান্তর করে এবং তার গর্ভে একাধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য। ভালোবাসার মৌলিক অধিকার নিয়ে জনমত কিংবা আদালত যাই বলে থাকুক না কেন, তাতেও নিজেদের ভাবনা বদলাতে নারাজ হিন্দুত্ববাদীরা। এদিকে আবার সম্প্রতি কেরলের এক মুসলিম নেতাও দাবি করেছিলেন, লাভ জিহাদের পালটা হিসেবে মুসলিম মেয়েদের অপহরণ করে বিয়ে করছে হিন্দু পুরুষেরা। যে দাবি নিয়ে শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক। এর মধ্যেই হিন্দু মুসলিম বিয়ের এই ঘটনাটিতে নতুন করে জল্পনা উসকে উঠল দেশে।