যে কোনও সময় তিনবার ‘তালাক’ শব্দটি উচ্চারণ করলেই ভেঙে যাবে বিয়ে। মুসলিম মহিলাদের এই অনিশ্চয়তা থেকে রেহাই দিতেই তিন তালাক প্রথা নিষিদ্ধ করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু এর ফলে কতখানি সুবিধা পেয়েছেন ওই মেয়েরা? নাকি এই আইনের প্রেক্ষিতে আরেকরকম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের? তিন তালাক নিষিদ্ধ হওয়ার পর গার্হস্থ্য নির্যাতনের হার বেড়েছে বলেই দাবি করছেন মুসলিম নারীদের একাংশ। শুনে নেওয়া যাক তাঁদের কথা।
চাইলেই বিবাহবিচ্ছেদের উপায় নেই। এক কথায় ‘তালাক’ শব্দ উচ্চারণ করে বিয়ে ভেঙে দেওয়া যাবে না আর। তাই বিয়ে ভাঙার জন্য ঘুরপথে হাঁটছেন মুসলিম পুরুষদের একাংশ। স্ত্রীর প্রতি বাড়ছে অত্যাচারের মাত্রা, যাতে তিনি নিজেই বিবাহবিচ্ছেদ নিতে বাধ্য হন। সম্প্রতি এমনটাই অভিযোগ করেছেন অনেক মুসলিম মহিলা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় জমা পড়ছে অভিযোগ। তাঁদের কথা থেকে স্পষ্ট, মুসলিম মহিলাদের অধিকার রক্ষার জন্য যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, তাতে কখনও কখনও হিতে বিপরীত হচ্ছে। তিন তালাক প্রথায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা যে এক শ্রেণির পুরুষের ক্ষোভ বাড়িয়েছে, তা উঠে এসেছে সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। আর সেই ক্ষোভই ফেটে পড়ছে স্ত্রীর প্রতি অত্যাচারের চেহারায়।
আরও শুনুন: হিজাব পরার অধিকার চেয়ে ছাড়তে চেয়েছিলেন পড়াশোনা, দ্বাদশের পরীক্ষায় প্রথম সেই ছাত্রী
২০১৯ সালে মুসলিম মেয়েদের জন্য মুসলিম নারী আইন পাশ করে মোদি সরকার। মুসলিম মহিলাদের বিয়ের পরবর্তী সময়ে নিজের অধিকার রক্ষা করার দিকটি সুনিশ্চিত করে এই নয়া আইন। আর সেই কারণেই তাৎক্ষণিক ভাবে তিন তালাক দেওয়ার প্রথাকে আইনত দণ্ডনীয় বলে ঘোষণা করে এই আইন। মুসলিম সমাজে প্রচলিত এই তিন তালাক প্রথার দরুন কোনও পুরুষ যে কোনও সময় তিনবার তালাক বলে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারতেন। কিন্তু এমন ঘটনায় ওই মহিলাকে যে কী অসহায় অবস্থায় পড়তে হত তা বলাই বাহুল্য। ফলে আইন করে তিন তালাক বন্ধ করে দেওয়ার দরুন আশার আলো দেখেছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব মানুষই। কিন্তু মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশই এই আইনকে ভালভাবে মেনে নিতে পারেনি। আইনের বিরোধিতা করা সম্ভব নয়, কারণ এই আইন মোতাবেক স্ত্রীকে তিন তালাকে বিবাহ বিচ্ছেদ দেওয়া শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। আর এই অপরাধে স্বামীকে তিন বছর পর্যন্ত হাজতবাস করতে হতে পারে। আইনকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাচ্ছে না বলে বিচ্ছেদের জন্য অন্য পথ খুঁজতে চাইছেন মুসলিম পুরুষদের একাংশ। মুসলিম সমাজে পুরুষদের বিচ্ছেদ নেওয়ার জন্য যেমন তিন তালাক প্রথা ছিল, তেমনই ‘খুলা’ প্রথার মাধ্যমে কোনও নারীও বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে পারেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে স্ত্রীকে নির্যাতন করে ‘খুলা’ প্রথা অবলম্বন করার দিকে ঠেলে দিচ্ছে অনেকে। এক্ষেত্রে স্ত্রী নিজেই বিচ্ছেদ চাইছেন বলে তাঁকে খোরপোশ দেওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। তাই বিচ্ছেদের জন্য এই উপায়টিকেই রীতিমতো সুবিধাজনক বলে মনে করছে অনেকেই। যার দরুন মুসলিম মহিলাদের পরিস্থিতি যে তিমিরে ছিল সেখানেই থেকে যাচ্ছে।
আরও শুনুন: গাড়ির দরজায় ‘ঝুলে প্রচার’! খোদ মোদির বিরুদ্ধেই পুলিশে অভিযোগ ব্যক্তির
দিন দিন মুসলিম সমাজে মহিলাদের এইভাবে নির্যাতন করার হার আরও বাড়ছে, এমনটাই জানাচ্ছে সমীক্ষা। তাহলে কি হিতে বিপরীত হল এই আইনের ফলে? তিন তালাক নিষিদ্ধ করে কি মুসলিম মহিলাদের আরও সমস্যার মুখে ঠেলে দিল সরকার? উঠছে প্রশ্ন।