জামায় লেখা রামের নাম। এটাই অপরাধ। থানায় অভিযোগ দায়ের হল মুসলিম দোকানির নামে। তদন্তে নামতে হল পুলিশকে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল ছড়াল যোগীরাজ্যে। ঠিক কী ঘটেছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ধর্মে মুসলিম। অথচ পরে আছেন রামের নাম লেখা জামা। এমনটা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা। মুসলিম দোকানির নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। শুধু রামের নাম লেখা জামা পরা নয়, দোকানির বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ তোলেন হিন্দুত্ববাদীরা।
আরও শুনুন:
বাঁচার জন্য হিন্দুদের জোট বাঁধার পরামর্শ ভাগবতের… বিপদ তো মোদিই, পালটা ওয়াইসির
বছরের শুরুতেই অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেই উপলক্ষে বিশেষভাবে সেজে উঠেছিল গোটা উত্তরপ্রদেশ। দিকে দিকে রামের নাম লেখা পতাকা টাঙানো হয়েছিল। রামনাম লেখা জামাও রীতিমতো জনপ্রিয় হয়েছিল গোটা দেশে। সাধারণ এই জামা যে কেউ কিনতে পারেন। ক্রেতার ধর্ম দেখে জামা বিক্রি হয় না মোটেও। সেই মতো রাম নামের জামা কিনেছিলেন মহম্মদ কাল্লু। সেটি পরেই রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। এতে তাঁর কোনও সমস্যা না হলেও, হিন্দুত্ববাদীদের হয়েছে। জামা পরার অপরাধে রীতিমতো হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে এই মুসলিম দোকানিকে।
আরও শুনুন:
তীর্থ যোগে মিলছে ভারত ও পাকিস্তান, এবার কি ক্রিকেট-ধর্মেও খুলবে দুই দেশের দরজা?
ঘটনা যোগীরাজ্যের কানপুর শহরের। সেখানকার গুজাইনি অঞ্চলে মহম্মদ কাল্লুর দোকান। প্রতিদিন নিরামিষ কাবাব বিক্রি করেন তিনি। সঙ্গে থাকে নিরামিষ পকোড়া। ভিড়ও হয় মোটামুটি। একদিন রামের নাম লেখা জামা পরে দোকানে বসেছিলেন মহম্মদ। অন্যান্য দিনের মতো বিক্রি করছিলেন কাবাব, পকোড়া। এমন সময় তাঁর দোকানে হাজির হন বজরং দলের দুই সদস্য। প্রথমে কিছু গোল পাকাননি তাঁরা। পকোড়া, কাবাব কিনে খেতে শুরু করেন। যত সমস্যা এরপরেই। কাবাব খেতে গিয়ে তাঁদের মনে হয় এর মধ্যে কিছু মেশানো আছে। সঙ্গে সঙ্গে দোকানির পরিচয় জানতে চান। মুসলিম নাম শুনেই বেজায় চটে যান দুজনে। একে তো খাবারের স্বাদ সন্দেহজনক, তার ওপর মুসলিম ব্যক্তি রামের নাম লেখা জামা পরেছেন! থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান দুই হিন্দুত্ববাদী। ততক্ষণে সংগঠনের আরও অনেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। পুলিশ এসে মহম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পকোড়ায় ভেজাল মেশানো অভিযোগের কথা জানানো হয় তাঁকে। নিরীহ দোকানি সাফ জানিয়ে দেন, সম্পূর্ণ নিরামিষ এই খাবারে কোনও ভেজাল নেই। তাতে বজরং দলের সদস্যরা আরও চটে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। প্রশ্ন ওঠে, কেন রামের নাম লেখা জামা পরেছেন মুসলিম দোকানি? তাতেও কোনও বিশেষ কারণ দেখাতে পারেননি মহম্মদ। সেই মুহূর্তে পরিস্থিতি কোনওক্রমে সামাল দেন পুলিশ কর্মীরা। তবে ঘটনায় তদন্ত জারি রয়েছে। জানা গিয়েছে, মুসলিম দোকানির বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এবং খাবারে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ তুলেছে বজরং দল। কোনও এফএইআর দায়ের হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যেহেতু লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি তাই মহম্মদ কাল্লুর বিরুদ্ধে আপাতত কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তবে আগামীদিনে প্রয়োজন পড়লে ব্যবস্থা করা হবে, এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকরা।