রাম মন্দির উদ্বোধনে অযোধ্যা গিয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ ফতোয়া জারি হল ইমামের বিরুদ্ধে। এমনকি তাঁকে প্রাণ নাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে ঠিক কী জানিয়েছেন ইমাম? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার সাধুসন্ত। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন, মুসলিম ইমাম উমার আহমেদ ইলিয়াসি। অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্মগুরুদের মাঝেই দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে এই ঘটনার জেরেই তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছে এক মুসলিম সংগঠন। অভিযোগ, তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
আরও শুনুন: হিন্দু দেবতাদের পুজো নয়, রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার আবহে পরামর্শ দিয়ে গ্রেপ্তার শিক্ষক
রামের নামে মুছবে ধর্মের ভেদ। এমনটা আগেই ঘোষণা করেছিল রাম মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দির উদ্বোধনের দিন সেই ছবি দেখাও গিয়েছে মন্দির চত্বরে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সাধু সন্ন্যাসীদের ভীড়েই দেখা গিয়েছিল অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান উমর আহমেদ ইলয়াসিকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বেশ প্রশংসাই করেছিলেন বর্ষীয়ান ইসলাম ধর্মগুরু। অযোধ্যা থেকেই দিয়েছিলেন সম্প্রীতির বার্তা। তবে তাঁর এই কাজ ভালোভাবে নেয়নি এক মুসলিম সংগঠনই। অভিযোগ, মুফতি সাবির হুসেইনির নেতৃত্বাধীন ‘মুফতি ক্লাসেস’ নামে একটি দল ইমামের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছে। সেখানে ইমামের বিরুদ্ধে নানা অপশব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। শুধু তাই নয়, মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পরই ইমামের প্রাণ নাশের হুমকি আসতে শুরু করে। যার জেরে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে বাধ্য হন ইমাম। যদিও এই হুমকি না ফতোয়ার জেরে নিজের কাজকে ভুল বলতে মোটেও রাজি নন উমার আহমেদ। তাঁর দাবি, রাম মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহু আগেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পাঠায়। সেখানে তাঁর পদের উল্লেখ ছিল। প্রথ ম কদিন এই নিয়ে দ্বন্দে থাকলেও, পরে রাম মন্দির যাওয়ার সিদ্ধান্তই নেন উমার। আসলে, তাঁর পদের সম্মান রক্ষার্থে এই নিমন্ত্রণ তাঁকে গ্রহণ করতে হত, বলেই মনে করছেন উমার। এ প্রসঙ্গে তাঁর আরও দাবি, অযোধ্যার অনুষ্ঠানে তাঁর কোনওরকম অসুবিধা হয়নি। বরং মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁকে যে সম্মান দেখিয়েছে, তাতে তিনি যথেষ্ট আপ্লুত। শুধু তাই নয়, রাম মন্দির ঘিরে যেভাবে গোটা দেশে উন্মাদনা ছড়িয়েছে, সে আবহে দেশবাসীকে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়াও তাঁর কর্তব্য বলেই মনে করেছেন এই ইমাম।
আরও শুনুন: ৩৫ বছর ধরে রামচরিতমানস পড়ে শোনান, রাম মন্দিরেও যেতে চান যোগীরাজ্যের মহম্মদ
এদিকে এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে জারি হয়েছে ফতোয়া। যা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছেন তিনি। আহমেদ-এর কথায়, তাঁকে যারা ভালোবাসেন তাঁরা কখনই তাঁর এই কাজ অসমর্থন করবে না। নিতান্তই যারা অশ্রদ্ধা করেন তাঁরাই এমনটা করতে পারেন বলে দাবি ইমামের। তাই জোর গলায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যতই ফোতয়া জারি হোক, তিনি ক্ষমাও চাইবেন না, ইস্তফাও দেবেন না। একইসঙ্গে, ভারত কোনও ইসলামিক দেশ নয়, এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন ইমাম। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে থাকা সকলকে পাকিস্তান চলে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ইমামের রাম মন্দিরের যাওয়া নিয়ে সরগরম নেটদুনিয়া। একদিকে তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা মুসলিম সংগঠন। অন্যদিকে ইমাম ও তাঁর সমর্থনকারীরা। তবে এই ঘটনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরেও পৌঁছেছে বলেই খবর। তাই আগামী দিনে এই ইস্যুতে পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।