দেবভাষা সংস্কৃত। হিন্দুধর্মের উচ্চশ্রেণির মানুষ ছাড়া একসময় এই ভাষা চর্চারই অধিকার ছিল না কারও। কিন্তু সেই ভাষাতেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সম্প্রতি তাক লাগিয়ে দিয়েছে এক মুসলিম পড়ুয়া। এই সাফল্য যেন ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদেরই এক সপাট জবাব। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এ দেশে থাকতে হলে হিন্দুদের রীতিনীতিই আত্মস্থ করতে হবে মুসলিমদের, এমনটাই চায় কেন্দ্র সরকার- সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন কেরলের বাম নেত্রী কে কে শৈলজা। এমনিতেই মুসলিমদের উদ্দেশে মাঝে মাঝেই বিদ্বেষের তির ধেয়ে আসে হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে। সেইসব বিদ্বেষের মুখেই যেন সপাট জবাব দিল যোগীরাজ্যের এই পড়ুয়া। সংস্কৃত, যে ভাষাকে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ভাষা বলেই দাগিয়ে দেন অনেকে, দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় সেই ভাষাতেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে সে। আর তার এই সাফল্য যেন আরও একবার বুঝিয়ে দিল, আসলে এইসব বিভাজন মানুষের মনগড়া মাত্র।
আরও শুনুন: প্রত্যেক জেলায় হোক ‘সংস্কৃত গ্রাম’, অভিনব উদ্যোগ উত্তরাখণ্ডের
হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই নজির গড়েছে মহম্মদ ইরফান নামের এই পড়ুয়া। তার বাবা সালাউদ্দিন পেশায় খেতমজুর। দিনে রোজগার মেরেকেটে শ-তিনেক টাকা। ছেলেকে নামী কোনও স্কুলে পড়ানোর ক্ষমতা দূরে থাক, কোনওক্রমে ছেলের পড়াশোনার খরচ চালান তিনি। বলাই বাহুল্য, তার বয়সি অন্যান্য পড়ুয়াদের মতো পড়াশোনা করার সঠিক পরিবেশ পায়নি এই কিশোর। তবে সেসব নিয়ে কোনও অভিযোগ ছিল না তার। বরং পড়াশোনা করতে ভালোই বাসে সে। তাই হাজারও অসুবিধা সত্ত্বেও নিজের পরিশ্রমের দিক দিয়ে সে কোনও খামতি রাখেনি। আর তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। উত্তরপ্রদেশ মাধ্যমিক সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদের পড়ুয়া হিসেবে আরও ১৪ হাজার পরীক্ষার্থীর সঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বসেছিল এই কিশোর। ওই বোর্ডের নিয়ম মাফিক সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য, এই দুটি বিষয়ে তাদের পরীক্ষা দিতে হয়। আর তাতেই বাকি সবাইকে ছাপিয়ে সর্বোচ নম্বর পেয়েছে ইরফান। ভবিষ্যতে সংস্কৃতের অধ্যাপক হতে চায় ওই পড়ুয়া। ছেলের স্বপ্নকে সমর্থন করেছেন তাঁর বাবাও। তিনি মনে করেন ভাষা শেখার কোনও ধর্মীয় গণ্ডি থাকতে পারে না। ওই পড়ুয়ার এই সাফল্যে খুশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও।
আরও শুনুন: সংখ্যায় বাড়ছে বিশেষ এক ধর্মের ‘বেআইনি ধর্মস্থান’, মুম্বইতে প্রতিবাদ মিছিল হিন্দুত্ববাদীদের
যদিও ধর্ম পরিচয় যে কারও পাণ্ডিত্যের মাপকাঠি হতে পারে না, সে উদাহরণ ইতিহাসে ভূরি ভূরি রয়েছে। বিখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ মহম্মদ শহীদুল্লাহ ধর্মে মুসলিম ছিলেন, অথচ সংস্কৃতে তাঁর অসামান্য পাণ্ডিত্যের কথা সকলেরই জানা। আরও অনেকেই এমন রয়েছেন যাঁদের ধর্মপরিচয় মুসলিম হলেও হিন্দু পুরাণ বা সংস্কৃতে তাঁরা অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। কিন্তু বর্তমানে দেশজোড়া ধর্মীয় বিভাজনের সামনে অনেকখানিই ঢাকা পড়ে যায় এই কথাগুলি। সেই প্রেক্ষিতেই তাৎপর্যপূর্ণ যোগীরাজ্যের এই ঘটনা।