করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল ২০২০ সালে। সরকারের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ঘরে থেকে না বেরোলে কিংবা অন্যান্য মানুষের সঙ্গে না মিশলে এই অতিমারী ছড়িয়ে পড়া আটকানো সম্ভব। সেই আদেশ মেনে বিগত ৩ বছর ধরে নিজেদের গৃহবন্দি করে রেখেছেন এক পরিবারের দুই সদস্য। বিগত কয়েক বছরে নাকি সূর্যের আলোটুকুও দেখেননি তাঁরা। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন, শুনে নিই।
বিশ্বজুড়ে কোভিড অতিমারী দেখা দিয়েছিল ২০২০ সালে। সেই ঝড় সামলে ৩ বছর কাটানোর পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে পৃথিবী। আবার নতুন করে করোনার উপদ্রব শুরু হলেও, মাঝের সময়টায় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছিল জনজীবন। তবে সকলের মন থেকে পুরনো দিনের সেই আতঙ্ক পুরোপুরি মুছে যায়নি। যার উদাহরণ পাওয়া গেল অন্ধপ্রদেশের কাকিনাড়া জেলার এক গ্রামে। জানা গিয়েছে, সেই গ্রামের বাসিন্দা মানি এবং তাঁর মেয়ে দুর্গা ভবানী বিগত তিন বছর ধরে কোভিডের আতঙ্কে নিজেদের গৃহবন্দি করে রেখেছেন।
আরও শুনুন: কাবু হবে করোনা, মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নয়া হাতিয়ার ভারতীয় গবেষকের ‘ইনস্টাশিল্ড’
করোনা সংক্রমণ রুখতে ২০২০ সালের মার্চ মাসে অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও জারি হয়েছিল সম্পূর্ণ লকডাউন। একইসঙ্গে, বহু প্রিয় মানুষের মৃত্যু আর অতিমারীর ভয়ঙ্কর রূপ দেখে সকলের মনেই জন্ম নিয়েছিল এক অজানা আতঙ্ক। নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর কাজ করতেও কসুর করেননি দেশবাসী। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে দীর্ঘদিন নিজেদের গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন অনেকেই। তারপর কেটে গিয়েছে ৩টি বছর। পুরনো আতঙ্ক ভুলে নিউ নরম্যালে নিজেদের অভ্যস্ত করছে মানুষ। সেই ভিড়ে ব্যতিক্রম হিসেবে ধরা দিলেন অন্ধপ্রদেশের জেলার কুয়েরু গ্রামের বাসিন্দা মানি। করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় তিন বছর ধরে মেয়েকে নিয়ে গৃহবন্দি রয়েছেন তিনি। এতগুলো দিনে এক মুহূর্তের জন্যও নিজের ঘর ছেড়ে বেরোননি তিনি। এমনকি নিজের স্বামীকেও বিগত চার মাস ঘরে ঢুকতে দেননি ওই মহিলা। অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হলো মা-মেয়েকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মানি-র স্বামী সুরি বাবু একজন সবজি বিক্রেতা। ২০২০ সালে দেশজুড়ে লকডাউন জারি হওয়ার পর তিনিই নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে ঘর থেকে বেরোনোর জন্য নিষেধ করেছিলেন। পাশাপাশি করোনার ভয়বহতা সম্পর্কেও তাঁদের জানিয়েছিলেন সুরি। সেই থেকেই কোরোনার ভয় দারুণ ভাবে গ্রাস করেছে এই মা-মেয়েকে। তাঁরা স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরের মধ্যে বন্দি করে ফেলেন। এমনকি দিনের বেলা স্বামীকেও ঘরে ঢুকতে দিতেন না মানি। সূর্যাস্তের পর নিয়ম করে তাঁদের খাবার পৌঁছে দিতেন সুরি। এভাবেই কেটেছে এতগুলো দিন। হঠাৎ একদিন খাবার পৌঁছাতে গিয়ে ঘরের ভিতর থেকে চিৎকারের আওয়াজ পান সুরি। ভয় পেয়ে পুলিশে খবর দেন তিনি। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখতে পায় ভিতর কম্বল মুড়ি দিয়ে পড়ে আছেন দুজন। আপাতত তাঁরা দুজনেই মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন একা থাকার ফলে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তাঁরা। সুরি যে চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন সেটিও নাকি তাঁর মেয়ে দুর্গাই করেছিল। দুর্গার ধারণা ছিল কেউ জাদুবিদ্যার মাধ্যমে তাঁর পরিবারের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। তাই তিনি ঘরের ভিতর বন্দি থেকে চিৎকার করে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতেন।
আরও শুনুন: আর দেরি নয়, এবার মাত্র ৪ মিনিটেই জানা যাবে করোনা পরীক্ষার ফল
নতুন করে আবার করোনার ভয় ছড়াচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। তবে এই আতঙ্ক যে কোন মাত্রায় পৌঁছাতে পারে, এই মা-মেয়ের ঘটনা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।